দেশের চার জেলার সীমান্ত দিয়ে ঠেলে দেওয়া হলো আরও ১০৫ জনকে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গতকাল ভোরে তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানালেও বিএসএফ তাতে সাড়া দেয়নি। কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, জেলার রৌমারী, নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারীর তিন সীমান্ত দিয়ে ৩৮ জনকে পুশইন করা হয়েছে। রৌমারী সীমান্ত দিয়ে ১৪ এবং নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী সীমান্ত দিয়ে ২৪ জন পাঠানো হয়। এ পুশইনের ঘটনায় ওই তিনটি সীমান্তে সকাল থেকে উত্তেজনা বিরাজ করে।
ভোর ৪টার দিকে রৌমারীর বড়াইবাড়ী সীমান্তে ১০৬৭ নম্বর পিলারের কাছে নোমান্সল্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা কেন্দ্র করে সীমান্তে কয়েক রাউন্ড গোলাগুলি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। বর্তমানে পুশইন ঠেকাতে এলাকাবাসীর সহায়তায় বড়াইবাড়ী বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন বলেও জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, ১৪ জন নারী-পুরুষকে বড়াইবাড়ী সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ পুশইন করছে এমন খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা তৎপর হয়ে উঠলে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে বিজিবির পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হলেও বিসএফের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে। বেলা ২টা পর্যন্ত সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডেই পুশইন করা ব্যক্তিরা অবস্থান করেন বলে জানা গেছে।
এদিকে জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট এলাকার বাবুরহাট ও নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার সীমান্ত দিয়ে ভোরবেলা আরও ২৪ জনকে পুশইনের ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, ১৮ দিন পর আবারও সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশখালী সীমান্ত দিয়ে ২৩ বাংলাভাষী নাগরিককে পুশইন করেছে বিএসএফ। গতকাল ভোরে তাদের পুশইন করা হয়। ২৩ জনের মধ্যে সাতজন নারী, সাতজন পুরুষ এবং নয়টি শিশু রয়েছে। সীমান্ত থেকে সকালে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় বিজিবি জওয়ানরা কুশখালী বিজিবি ক্যাম্পে হেফাজতে রাখেন। ভারতীয় পুলিশ ও বিএসএফ কর্তৃক পুশইন করা ২৩ বাংলাভাষী নাগরিক জানান, তারা অধিকাংশই ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের বিভিন্ন ইটভাটায় ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে কাজ করেছেন। এদের অধিকাংশের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায়।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল হক জানান, পুশইন ২৩ নারী-পুরুষ-শিশু বাংলাদেশি নাগরিককে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, বিএসএফ নারী, শিশুসহ ৩০ জনকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পুশইন করেছে। গতকাল ভোররাতে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস সীমান্তে এ ঘটনা ঘটেছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) আনন্দবাস ক্যাম্পের সদস্যরা জানান, ভোররাতে পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত হয়ে সোনাপুর মাঝপাড়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এসব বাংলাদেশিকে ঠেলে দেয় বিএসএফ। তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে অটোযোগে মেহেরপুর শহর অভিমুখে যাত্রা করেন। এ সময় মুজিবনগরের মনোরমা পার্কের সামনে থেকে বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করেন।
বিজিবি চুয়াডাঙ্গা-৬ ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার নাজমুল হাসান জানান, আটকদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে অবৈধভাবে অবস্থান করছিলেন এবং বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের আটক করে ফেরত পাঠিয়েছেন। অধিকাংশের বাড়ি কুড়িগ্রামে।
আটকদের সূত্রে জানা যায়, এরা বেশ কয়েক বছর আগে জীবিকার সন্ধানে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে গিয়েছেন। সেখানে দিনমজুর, হোটেল কর্মী ও কৃষিকাজে নিযুক্ত ছিলেন। এক সপ্তাহ আগে হরিয়ানার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভারতীয় পুলিশ তাদের আটক করে। পরে বহরমপুরের একটি জেলে রাখে। সেখান থেকেই বিএসএফ তাদের সীমান্তে নিয়ে এসে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।
মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, বিজিবি ৩০ জনকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করেছে। তাদের যাচাইবাছাই চলছে। পরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, জেলার পানছড়ি উপজেলার লোগাং সীমান্ত দিয়ে ১৪ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। এদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে। স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, পুশইন হওয়া লোকজনকে হরিয়ানা থেকে বিমানে আগরতলায় নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে দক্ষিণ ত্রিপুরার করবুকের সীমান্তবর্তী গুলোমণিপাড়ায় বিএসএফ নিয়ে আসে। পরে সুযোগ বুঝে সোমবার রাতে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়।