দেশের বিভিন্ন জেলায় গত জানুয়ারি মাস থেকে শিশুদের টিকা, জলাতঙ্কসহ বেশ কিছু টিকার সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে টিকা নিতে গিয়ে ফিরে আসছেন অভিভাবকরা। প্রাণীর কামড়ে আহত হলে মিলছে না জলাতঙ্ক টিকা। জীবন বাঁচাতে কয়েক গুণ বেশি দামে বাইরে থেকে টিকা কিনতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এ এফ এম সাহাবুদ্দিন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত টিকা সরবরাহ করছি। আগের মতো স্টক আউট অবস্থা নেই। তবে শিপমেন্ট আসতে দেরি হলে হয়তো পৌঁছাতে সময় লাগছে। এ ছাড়া ৬৪ জেলায় তো এক দিনে পাঠানো সম্ভব না। গাড়ি পৌঁছাতেও দেরি হতে পারে।’ অপারেশনাল প্ল্যান (ওপি) না থাকায় টিকা কিনতে সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওপির কারণে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় টিকা রাজস্ব খাত থেকে কেনা হচ্ছে।’
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতায় জন্মের পর থেকে ২৩ মাস বয়সের মধ্যে শিশুদের ১০টি বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক এই টিকা দেওয়া হয়। এসব টিকার মধ্যে পিসিভি, আইপিভি, পেন্টা ভ্যালেন্ট, এমআরের সংকট চলছে। ইপিআইয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে ১ লাখ ৩৪ হাজার আউটরিচ সেন্টারে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এসব টিকাকেন্দ্র সরকারি, বেসরকারি এবং উন্নয়ন সহযোগীদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। গ্রামে মূলত সরকারি টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। শহরে সরকারি টিকাদান কেন্দ্রের পাশাপাশি বেসরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, বেসরকারি হাসপাতাল এবং এনজিওর মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রম চলে। দেশে শিশুদের জন্য প্রতি মাসে সাত ধরনের ৮৯ লাখ ৪২ হাজার টিকা কিনছে সরকার। ইপিআইয়ের টিকা সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত তিন কারণে টিকা সংকট তৈরি হয়েছে। গাড়ি ও লোকবল সংকট, ওপির কারণে প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া নিয়ে সময়ক্ষেপণ এবং প্রয়োজনের তুলনায় টিকা কম পাওয়া। গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজবাড়ী জেলা সদর হাসপাতালে নেই জলাতঙ্কের টিকা। ফলে কুকুর, বিড়াল ও ইঁদুরে কামড়ানো রোগীদের হাসপাতালে এসে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। টিকা নিতে হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে দেড় শতাধিক রোগী আসছেন বলে জানা গেছে। সিভিল সার্জন ডা. এম এম মাসুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মাসখানেক আগে যোগদান করেছি। আমি আসার আগে থেকেই রাজবাড়ীর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে জলাতঙ্কের টিকা সরবরাহ নেই। আশা করি আগামী সপ্তাহে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে টিকা পৌঁছে যাবে।’ রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এস আই এম রাজিউল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘নিবন্ধিত হাজির জন্য প্রয়োজনীয় টিকা সংগ্রহে আছে। তবে বাইরে থেকে যারা আসছেন, তাদের দিতে পারছেন না। ইপিআই কার্যক্রমের টিকা ঘাটতি আছে। বেশ কিছু দিন থেকেই এই ঘাটতি চলছে।’ কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর মোহাম্মদ বশির আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কিছু টিকার সংকট রয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুতই সংকট কেটে যাবে।’ বাংলাদেশে সরকার পিসিভি, টিডি, এমআর এবং ওপিভি এই চার ধরনের টিকা নিজের টাকায় কেনে। পিসিভি ও আইপিভি টিকার কিছু দেয় বৈশ্বিক টিকা সহায়তা প্রোগ্রাম কোভ্যাক্সের আওতায় ভ্যাকসিন জোট গ্যাভি। প্রথম সংকট শুরু হয় গ্যাভি প্রয়োজনীয় টিকা না দেওয়ায়। ৪১ লাখ শিশুর টিকা না দিয়ে গ্যাভি দিচ্ছে ৩৩ লাখ। এই ৮ লাখ টিকা কম থাকায় সারা বছরই টিকার সংকট থাকে।