প্রিয়জনের সঙ্গে পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপন করতে বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল নেমেছে। সরকারি-বেসরকারি অফিসে শেষ কর্মদিবস হওয়ায় গ্রামমুখী মানুষ গতকাল বাস, ট্রেন, লঞ্চ ছাড়াও ব্যক্তিগত নানান পরিবহনে বাড়ির উদ্দেশে রওনা করেছেন। দূরপাল্লার যানবাহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানেও নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন অনেকে। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঝুঁকি নিয়ে রওনা হয়েছেন অনেকে। আজও ঢাকা ছেড়ে নাড়ির টানে বাড়ির পানে যাত্রায় স্রোত থাকবে মানুষের। এবারের ঈদযাত্রায় বড় কোনো দুর্ভোগ বা ভোগান্তির চিত্র এখনো মেলেনি। রাস্তায় পরিবহনের চাপ বাড়লেও অনেকটা স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরছেন মানুষ। ঈদযাত্রা স্বস্তি হলেও গতকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে অন্যান্য দিনের চেয়ে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুন গাড়ি চলাচল করছে এ সড়কে। গাজীপুরের শিল্পাঞ্চল থেকে ঘরমুখী মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যাত্রীদের চাপ বাড়লেও যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। মহাসড়কে যানজটের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে টহল ও তদারকি কার্যক্রম শুরু করেছে সেনাবাহিনী। ড্রোন দিয়েও মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। যমুনা সেতুর পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়েজ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও যানজট নেই। মহাসড়কে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সেনাবাহিনী, গাজীপুর মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন সমন্বিতভাবে কাজ করছে। আমাদের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, কোরবানির পশু পরিবহনের কারণে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। মহাসড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও স্বাভাবিক গতিতেই চলাচল করছে যানবাহন। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার এ মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের প্রায় ২৩টি জেলার ৯৮টি রুটের পরিবহন চলাচল করে। ঈদের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবসের দিনে বুধবার কয়েকদিনের তুলনায় যাত্রীর চাপ কিছুটা বেশি দেখা গেছে কমলাপুর রেল স্টেশনে। তিস্তা স্পেশাল ট্রেন ইলেকট্রিক ক্লিয়ারেন্সের কারণে আধাঘণ্টা দেরি হওয়া ছাড়া অন্য ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়েই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার সাজেদুল ইসলাম জানান, স্টেশনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন।
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। টিকিট ছাড়া কাউকে কমলাপুর প্ল্যাটফরমে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় নিরসনে ঢাকাগামী ৯টি আন্তনগর ট্রেনের বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি বাতিল করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঢাকাগামী একতা, দ্রুতযান, পঞ্চগড়, নীলসাগর, কুড়িগ্রাম, লালমনি, রংপুর, চিলাহাটি ও বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোর ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রাবিরতি থাকবে না। অন্যদিকে সুন্দরবন, মধুমতী, বেনাপোল, জাহানাবাদ, রূপসীবাংলা এক্সপ্রেস ও নকশীকাঁথা কমিউটার ট্রেন ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের শহরতলি প্লাটফরম থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। ঈদ-পরবর্তী রেলে ফিরতি যাত্রা শুরু হবে ৯ জুন। আজ বিক্রি হবে ১৫ জুনের অগ্রিম ট্রেনের টিকিট। রাজধানীর গাবতলী ও মাজার রোড এলাকায় বিভিন্ন বাস কাউন্টারে গিয়ে যাত্রীর চাপ লক্ষ্য করা গেছে গতকালও। গতকাল মাজার রোড এলাকায় আরাফাত পরিবহনের কাউন্টারের সামনে কথা হয় সৈয়দপুরগামী জামান আখতারের সঙ্গে। ছুটি শুরু হওয়ায় তিনি বাড়ির উদ্দেশে রওনা করেছেন। জামান জানান, ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হওয়ায় দূরপাল্লার বাসগুলোর কাউন্টার থেকে সময়মতোই বাস ছেড়ে যাচ্ছে। তবে রাজধানীতে চলাচল করা বাসগুলো ঈদ উপলক্ষে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যাত্রী পরিবহন করছে। ফলে গাড়ির চাপ বেড়েছে। চট্টগ্রাম থেকে আমাদের প্রতিবেদক জানান, এবারের ঈদে মানুষ বাড়ি ফিরছে স্বস্তির সঙ্গে। বাস কাউন্টারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ঈদে ঘরমুখো মানুষের তেমন চাপ নেই। নিয়মিত যাত্রার তুলনায় কিছুটা বাড়লে ভোগান্তি নেই ঈদযাত্রায়।