১৭ সপ্তাহ ধরে মিলছে না মজুরি। রেশনও বন্ধ। কবে মজুরি ও রেশন মিলবে সেটাও বলতে পারছে না মালিকপক্ষ। মজুরি ও রেশন না পেয়ে প্রায় এক মাস ধরে কাজে যান না শ্রমিকরাও। ফলে বন্ধ রয়েছে চা-পাতা উত্তোলনও। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাগান। বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্যাংক থেকে ঋণ নবায়ন না হওয়ায় মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়েছে কোম্পানি। গেল বছরের ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় এবার ব্যাংক নবায়ন করছে না। আর ঋণ না পেলে শ্রমিকদেরও মজুরি দেওয়া সম্ভব নয়। আর শ্রমিকদের দাবি, তাদের চুলা বন্ধ। মজুরি ও রেশন না পাওয়ায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পেটে ভাত না জুটলে হাতে কাজ ওঠে না- এমন দাবি তাদের।
এমন নাজুক অবস্থা চলছে সিলেটের তিনটি চা-বাগান ও একটি কারখানায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অব্যাহত লোকসানের মুখে মারাত্মক আর্থিক সংকটে রয়েছে বুরজান টি কোম্পানির মালিকানাধীন বুরজান, ছড়াগাঙ ও কালাগুল চা-বাগান এবং বুরজান চা ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানা। গত বছর কৃষি ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি কোম্পানি। ফলে এ বছর নতুন করে ঋণ মেলেনি। এ নিয়ে আইন-আদালত করেও কোনো লাভ হয়নি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অনড়। বকেয়া টাকা না পেলে নতুন ঋণ দেবে না। এ অবস্থায় তিনটি চা-বাগান ও একটি কারখানার স্থায়ী এবং অস্থায়ী প্রায় দেড় হাজার শ্রমিকের মজুরি ও রেশন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ফলে মারাত্মক বিপদে পড়েন শ্রমিকরা। একই অবস্থা বিরাজ করছে ন্যাশনাল টি কোম্পানির মালিকানাধীন লাক্কাতুড়া চা-বাগানেও। তবে গত মঙ্গলবার লাক্কাতুড়ার শ্রমিকদের একদফা বকেয়া মজুরি ও রেশন দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবারও কিছু বকেয়া মজুরি পরিশোধের কথা রয়েছে।
চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা জানান, বুরজান টি কোম্পানির মালিকানাধীন চা-বাগান ও কারখানাগুলোতে প্রায় ১৭ মাস ধরে মজুরি ও রেশন বন্ধ। শ্রমিকদের চুলায় আগুন জ্বলছে না। চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। বকেয়া মজুরি ও রেশন নিয়ে মালিকপক্ষের কাছ থেকেও কোনো ইতিবাচক সাড়া মিলছে না।
বুরজান টি কোম্পানির ব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান চৌধুরী জানান, কোম্পানির বাগানগুলো লোকসানে আছে। গতবারের ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় এবার ঋণ নবায়ন হয়নি। তাই শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মালিকপক্ষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে ঋণ না পেলে কোম্পানির আর্থিক সংকট কাটবে না। শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন দিতে হলে ব্যাংক ঋণ নবায়নের কোনো বিকল্প নেই।