বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার আন্তর্জাতিক সীমান্তে শূন্যরেখার ১৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া ও স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ ইস্যুতে কোনো ঐকমত্য ছাড়াই শেষ হয়েছে ৫৫তম সীমান্ত সম্মেলন। তবে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা ও কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে যৌথ পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) সীমান্ত সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সম্মেলনে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। অপরদিকে বিএসএফ মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশ নেয়।
সম্মেলন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী বলেন, সীমান্তের দেড় শ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর কাজ পুরোপুরি বন্ধ রাখা হবে- এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে বিজিবি মহাপরিচালক আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে সম্মেলনে বিশদভাবে আলোচনা হয়েছে। ভারত প্রস্তাব করেছে, যেসব জায়গায় বেড়া বসানো নিয়ে ইস্যু তৈরি হবে সেখানে দুই বাহিনীর পক্ষ থেকে যৌথ পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে সম্মেলন নিয়ে বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বন্ধ থাকা অন্য উন্নয়নমূলক কাজগুলোর ব্যাপারে যথোপযুক্ত পর্যায়ে জয়েন্ট ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে দ্রুত সমাধানের ব্যাপারে আলোচনা হয়। সীমান্তে নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো/হত্যা/আহত/মারধরের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যৌথ টহল বৃদ্ধি, উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী উপকৃত হবে এমন তাৎক্ষণিক ও আগাম গোয়েন্দা তথ্য একে অপরের মধ্যে আদানপ্রদান। সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণের মধ্যে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি, বিভিন্ন ধরনের আর্থ-সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি এবং সীমান্তে যে কোনো হত্যা সংঘটিত হলে তার যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন ধরনের আন্তসীমান্ত অপরাধ দমন বিশেষ করে ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য ও গবাদিপশু পাচার রোধ, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানব পাচার, স্বর্ণ, অস্ত্র, জাল মুদ্রার নোট প্রভৃতি চোরাচালান রোধ এবং এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তাৎক্ষণিক তথ্য আদানপ্রদান করবে বিজিবি-বিএসএফ। অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের ফলে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝি এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি দুই দেশের সীমান্তবর্তী জনসাধারণের মাঝে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে। এদিকে টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত রেখা বরাবর নতুন করে প্রায় ১০০টি স্থানে বেড়া নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি। পাশাপাশি চলমান সীমান্ত বেড়া নির্মাণকাজও অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। নতুন ১০০টি স্থানে বেড়া নির্মাণ প্রায় ৭০-৭২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে হবে, যা দুই পক্ষের যৌথ পরিদর্শনের পর শুরু হবে। ইতোমধ্যে ৯২টি স্থানে ৯৫.৮ কিলোমিটার সীমান্তে বেড়া নির্মাণকাজ চলছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তরেখায় বেড়া নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে। বাংলাদেশের মতে, এটি ১৯৭৫ সালের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত কর্তৃপক্ষের যৌথ নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে, যেখানে বলা হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক সীমান্তের শূন্য রেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে কোনো প্রতিরক্ষা কাঠামো তৈরি করা যাবে না। তবে ভারত বলছে, সীমান্ত বরাবর নির্মিত একক সারি বেড়াটি প্রতিরক্ষা কাঠামো নয়। বরং এটি অবৈধ অনুপ্রবেশ ও অপরাধ দমন করার জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে।