ইরানের চাবাহার বন্দরে ভারতের কার্যক্রমে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ছয় মাসের জন্য স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি। বুধবার থেকে এ ছয় মাসের ছাড় কার্যকর হয়েছে বলে তারা নিশ্চিতও করেছে, জানিয়েছে এনডিটিভি।
চাবাহার বন্দরের উন্নয়নে গত বছর ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেছিল ইরান। ওই চুক্তির বলে ভারতের রাষ্ট্র পরিচালিত ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড (আইপিজিএল) বন্দরটিতে ৩৭ কোটি ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে। নয়াদিল্লির জন্য এ চাবাহার বন্দর কৌশলগতভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ; এটি মধ্য এশিয়ার সঙ্গে তাদের সংযোগ প্রতিষ্ঠার প্রধান পথ হয়ে উঠতে পারে। আফগানিস্তানে সহজে মানবিক সহায়তা পাঠাতেও চাবাহারের গুরুত্ব অপরিসীম। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনায় দুই পক্ষের তীব্র দরকষাকষির মধ্যে ওয়াশিংটন চাবাহার বন্দরের ওপর নিষেধাজ্ঞায় ভারতকে ছাড় দিল।
‘বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে আমাদের। উভয় পক্ষই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আরও তথ্যের জন্য আমি আপনাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলব,’ বৃহস্পতিবার এমনটাই বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল। চাবাহার বন্দর উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে ২০১৮ সালের প্রথম ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনও ভারতীয় কোম্পানিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞায় বিরল ছাড় দিয়েছিল। অথচ সে সময় যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর একতরফাভাবে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল। ইরান তাদের প্রধান সমুদ্রবন্দর বন্দর আব্বাসের ওপর চাপ কমাতেই চাবাহারে মনোযোগ বাড়িয়েছে। চাবাহার বন্দরের ওপর গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ফিরে এসেছে জাতিসংঘের বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে সমঝোতা না হওয়ায় তেহরানের ওপর জাতিসংঘের এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। ভারত রাশিয়ার তেল কোম্পানির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাবও খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি। ‘সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারের ক্রমপরিবর্তনশীল পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই বিবেচনায় নিতে হয় আমাদের। জ্বালানির উৎসসংক্রান্ত প্রশ্নে আমাদের অবস্থান সুবিদিত। আমরা চেষ্টা করি যেন বিভিন্ন উৎস থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি সংগ্রহ করে ১৪০ কোটি মানুষের চাহিদা পূরণ করা যায়,’ বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। রাশিয়ার তেল কেনা নিয়ে ভারতকে পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে সমালোচনা করে আসছে ২০২২ সালের এপ্রিলেই তার কড়া জবাব দিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সে সময় তিনি বলেছিলেন, নিজেদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সস্তায় যেখানে তেল পাবে সেখান থেকেই কিনবে নয়াদিল্লি। ভারতের চেয়ে ইউরোপ জ্বালানির ব্যাপারে মস্কোর ওপর বেশি নির্ভরশীল বলেও তিনি অভিযোগ করেছিলেন।