জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এবার মুখ্য আলোচনার বিষয় গাজা। প্রায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজা এখন ধ্বংসের নগরী। হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু, ক্ষুধা আর অনাহারে ক্লিষ্ট গাজা। এমন পরিস্থিতিতে গাজায় যুদ্ধবিরতির জোরালো দাবি ওঠে এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনে। তবে সেই আহ্বান গ্রাহ্যই করছে না ইসরায়েল। বুধবারও গাজায় হামলা চালিয়ে অন্তত ৮৫ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
সর্বশেষ হামলায় গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর আশ্রয়স্থল আল-আহলি স্টেডিয়ামে কমপক্ষে ১২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে সাতজন নারী এবং দুজন শিশুও রয়েছেন। স্টেডিয়ামটি ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি অস্থায়ী আশ্রয়শিবির হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল, যা বুধবার রাতে আরেকবার গণহত্যার কেন্দ্রে পরিণত হয়।
গাজা সিটি থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া নাজওয়া নামের এক নারী আল জাজিরাকে জানান, আমার হাতে যা ছিল, শুধু তাই নিয়েই বেরিয়ে এসেছি। কিছু নিয়েই যেতে পারিনি। আমরা আতঙ্কিত। পরিবহণ খরচ অনেক বেশি। আমরা চাইলেও আমাদের জিনিসপত্র আনতে পারছি না।
জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজা সিটির ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার ওপর আতঙ্ক সৃষ্টি করছে এবং হাজার হাজার মানুষকে পালাতে বাধ্য করছে। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ আইয়াল জামির এর দাবি, ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তার জন্য দক্ষিণে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
যদিও জাতিসংঘের তদন্তকারীরা এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। এই সপ্তাহে একটি তদন্ত কমিশন উপসংহারে পৌঁছেছে যে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য হলো গাজার ওপর স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা এবং একই সাথে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও ইসরায়েলের ভেতরে ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করা।
জামির আরও দাবি করেন গাজার বেশিরভাগ মানুষই ইতোমধ্যে গাজা সিটি ছেড়ে চলে গেছে এবং সেনাবাহিনী এই বৃহত্তম শহুরে কেন্দ্রে একটি পদ্ধতিগত ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অগ্রগতি চালিয়ে যাবে।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধই প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের কাছ থেকে তীব্র নিন্দা কুড়িয়েছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বিশ্বনেতাদের উদ্দেশ্য বলেন, যদি আপনাদের মানুষের যন্ত্রণার প্রতি কোনো সহানুভূতি না থাকে, তবে আপনারা নিজেদের মানুষ বলে দাবি করতে পারেন না। শিশুদের হত্যা করে যারা ভয় দেখায়, সেই অপরাধীরা মানুষ নামের যোগ্য নয় এবং তারা কখনওই নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে প্রমাণিত হবে না।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমদ আল-শারা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছেন, আমরা গাজার জনগণের, তার শিশু ও নারীদের এবং সমস্ত আগ্রাসন ও লঙ্ঘনের শিকার মানুষের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছি। আমরা এই যুদ্ধের অবিলম্বে সমাপ্তি চাই।
নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ এইড আল জাজিরাকে নিশ্চিত করেছেন সংঘাতের অবসানের জন্য বর্তমানে গোপন আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, যারা ইসরায়েলের অবস্থানের সবচেয়ে কাছাকাছি, তারা বুঝতে শুরু করেছে যে আমরা এই অন্তহীন, অর্থহীন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারি না এবং এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও রয়েছে।
এদিকে, মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ আশা প্রকাশ করে বলেছেন, আগামী দিনগুলোতে আমরা কিছু ধরনের অগ্রগতির ঘোষণা দিতে সক্ষম হব। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২১-দফা শান্তি পরিকল্পনা বিশ্বনেতাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছেন।
তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কারণে পূর্বের শান্তি প্রস্তাবগুলো ভেস্তে গেছে। এর আগে চলতি মাসেই হামাস নেতাদের দোহায় ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করার সময় তাদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
নেতানিয়াহু গত ১৮ মার্চ একতরফাভাবে শেষ যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে সরে এসে ভয়াবহ বিমান হামলা শুরু করেন এবং সম্পূর্ণ সহায়তা অবরোধ আরোপ করেন, যার ফলে গাজায় দুর্ভিক্ষ ও অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যুদ্ধাপরাধের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
সূত্র: আল জাজিরা
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল