দেশের ফুটবলের অবস্থাকে ‘ওপর দিয়ে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট’ বলে মন্তব্য করলেন এক ক্লাব কর্মকর্তা। তিনি আবার বাফুফের নির্বাহী সদস্যও। হামজা, সামিত, ফাহামিদুলরা জাতীয় দলে খেলায় অনেক দিন পর উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। প্রবাসীরা খেলায় জাতীয় দলের শক্তিও বেড়েছে। আগামীতে আরও প্রবাসীরা খেলবেন। কর্মকর্তাটির প্রশ্ন-‘এতেই কি দেশের ফুটবলের করুণ চেহারা বদলে গেল?’ আসল জায়গায় যে করুণ অবস্থা তার খোঁজখবর রাখছে কে? ভেবেছে হামজাদের এনেই ফুটবলের সব জটিলতা দূর হয়ে যাবে। ঘরোয়া আসরই যে কোনো দেশের ফুটবলের মূল শিকড় তা আমরা ভুলে গেছি। শুধু ওপর দিয়ে ফিটফাট দেখালেই চলবে না।
বাংলাদেশ যে আন্তর্জাতিক ফুটবলে নাম লিখিয়েছে তার বড় অবদান ক্লাবগুলোর। তাদের খেলোয়াড় দিয়েই তো জাতীয় দল গড়া হয়। পেশাদার লিগই তো বর্তমানে দেশের সবচেয়ে মর্যাদাকর আসর। এখন সেই লিগই যদি সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকে তাহলে তো বড় দুশ্চিন্তা। কর্মকর্তাটির আক্ষেপ এতেই পরিষ্কার হয়ে ওঠে। অর্থসংকট এত তীব্র হয়ে উঠেছে যে ক্লাবগুলো নতুন মৌসুমে দল গড়ার পরিকল্পনা কোনোভাবেই করতে পারছে না। গত মৌসুম শেষ হয়েছে এক মাসও যায়নি। অথচ এরই মধ্যে নতুন মৌসুমের দলবদল শুরু হয়েছে। অনেক ক্লাবই গত মৌসুমে পেমেন্ট ক্লিয়ার করতে পারেনি। তারা নতুন মৌসুমে ঘর গোছাবে কীভাবে। এ চিন্তায় অস্থির ক্লাব কর্মকর্তারা। শোনা যাচ্ছে, আসছে লিগে দলের সংখ্যা বেড়ে ১২ হতে পারে। এটা হতেই পারে। কিন্তু দল গড়ার অর্থই তো পাচ্ছে না! বড় বা ছোট ক্লাবের একই অবস্থা। গত মৌসুম থেকেই সংকট পেয়ে বসেছে। এবার তো অন্ধকার দেখছে। লিগ চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান নতুন মৌসুমে দল সাজাতে সভা করেছে। পছন্দের খেলোয়াড়দের ধরে রাখার পাশাপাশি নতুনদের টার্গেট করেছে। ব্যস, এ পর্যন্তই সামনে আর এগোতে পারছে না। কারণ অর্থসংকট। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মাঝারি মানের দল গড়তেও কোটি টাকা লাগে। আর চ্যাম্পিয়ন ফাইট দিতে ২০ কোটিও নাকি ছাড়িয়ে যায়। পট পরিবর্তনের পর এ তো স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। যে আবাহনী কখনো অভাবে না পড়লেও তাদেরই এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বড্ড কঠিন সময় পার করছি।’ এমনকি বসুন্ধরা কিংস নাকি হিমশিম খাচ্ছে। জায়ান্টরা যখন সংকটে তখন অন্যদের অবস্থা কী হতে পারে তা সহজেই বোঝা যায়। ডোনেশনের ওপরই ক্লাবগুলো চলে। চরম সংকটে কেউ সহযোগিতা করতে আগ্রহী নয়। কী যে হবে এ নিয়ে চোখে শর্ষে ফুল দেখছেন ক্লাব কর্মকর্তারা।
ক্লাবগুলোর দুর্দিনে বাফুফে সহযোগিতা করা দূরের কথা, উল্টো ক্লাবগুলো তাদের কাছে লাখ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা চ্যাম্পিয়ন বা রানার্সআপের প্রাইজমানি পাচ্ছে না। বাফুফের কতটা করুণ হাল তা বসুন্ধরা কিংসকে দিয়েই বোঝানো যায়। পেশাদার লিগে অভিষেকের পর তারা টানা পাঁচবার লিগ, চারবার ফেডারেশন কাপ, তিনবার স্বাধীনতা কাপ, একবার চ্যালেঞ্জ কাপ ও নারী লিগে তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়। অথচ এখন পর্যন্ত নাকি কোনো প্রাইজমানি বুঝে পায়নি ক্লাবটি। পেশাদার লিগে অশনিসংকেত তো ফুটবলের জন্য দুশ্চিন্তায় বটে। অবস্থার পরিবর্তন না হলে নিয়মিতভাবে লিগ পরিচালনা করা মুশকিল হয়ে পড়বে। এ ধাক্কা অন্য লিগেও লাগবে। ঘরোয়া ফুটবলে অচলাবস্থা নেমে এলে হামজা কেন, মেসিদেরও জাতীয় দলে খেলিয়ে লাভ হবে না।