এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট এআই১৭১ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে সামনে এসেছে এক মারাত্মক তথ্য। এই দুর্ঘটনার নেপথ্যে আমেরিকান সংস্থা বোয়িং-এর বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে, যা বিমানের সুরক্ষা নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে। এই অভিযোগের মূলে রয়েছেন বোয়িং-এরই সাবেক এক কর্মী, যিনি সংস্থার অনিয়ম ফাঁস করে দিয়েছিলেন।
বার্নেটের অভিযোগ
বোয়িং-এর দক্ষ কর্মী জন বার্নেট, যিনি ২০১০ সাল থেকে বোয়িং-এর সাউথ ক্যারোলিনার নর্থ চার্লসটন প্ল্যান্টে কোয়ালিটি ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন, ২০১৯ সালে এক সাক্ষাৎকারে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন। এই প্ল্যান্টেই ৭৮৭ ড্রিমলাইনার তৈরি হত, এবং আজ যে ৭৮৭ ড্রিমলাইনার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে, তা নিয়েই ছিল তাঁর অভিযোগ। বার্নেট জানিয়েছিলেন, বোয়িং কর্মীদের উড়োজাহাজ তৈরির সময় নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করতে বাধ্য করা হত।
অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্বেগ
২০২৪ সালের মার্চ মাসে ৬২ বছর বয়সে রহস্যজনকভাবে মারা যান বার্নেট। তার মূল অভিযোগ ছিল উড়োজাহাজের অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা নিয়ে। তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, জরুরি অবস্থায় প্রতি চারটি অক্সিজেন মাস্কের মধ্যে একটি সঠিকভাবে কাজ করে না। তাঁর মতে, ত্রুটিপূর্ণ অক্সিজেন ব্যবস্থার কারণে ৩৫,০০০ ফুট উচ্চতায় এক মিনিটেরও কম সময়ে যাত্রীরা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন, এমনকি ৪০,০০০ ফুট উচ্চতায় মাত্র ২০ সেকেন্ডের মধ্যে এটি ঘটতে পারে, যা মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি বা মৃত্যুও ঘটাতে পারে।
নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহারের অভিযোগ
দক্ষিণ ক্যারোলিনায় কাজ শুরু করার পর থেকেই বার্নেট লক্ষ্য করেন যে, নতুন উড়োজাহাজ তৈরির সময়সীমা পূরণের তাড়াহুড়োয় যন্ত্রাংশ লাগানোর ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে আপস করা হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, কখনও কখনও উৎপাদন সময় মতো শেষ করার জন্য স্ক্র্যাপ বিন থেকে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ নিয়ে উড়োজাহাজে লাগানো হয়েছে, যা মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তিনি এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ম্যানেজারকে জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বোয়িং ৭৮৭ কারখানার ইঞ্জিনিয়াররাও সমস্যাগুলো রিপোর্ট না করার জন্য চাপ দিতেন বলে বার্নেট দাবি করেন।
আইনি লড়াই এবং রহস্যজনক মৃত্যু
বোয়িং সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পর জন বার্নেট স্বাস্থ্যজনিত কারণে অবসর গ্রহণ করেন এবং সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি পথে যান। তাঁর অভিযোগ ছিল, বোয়িং সংস্থার সঙ্গে বিরোধের জেরে তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে এবং তাঁর কর্মজীবনে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। বোয়িং কর্তৃপক্ষ তাঁর কোনো অভিযোগকেই মান্যতা দেয়নি। ফলস্বরূপ, ২০২১ সালে তিনি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করেন।
২০২৪ সালে বার্নেটের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। ওই দিনই তিনি বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে তাঁর মামলার বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। যদিও এটিকে আত্মহত্যা বলে দাবি করা হয়, বার্নেটের পরিবার এই দাবি মানতে রাজি ছিল না এবং বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে নতুন করে মামলা করে।
বর্তমান পরিস্থিতি
এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৭১ দুর্ঘটনার পর বার্নেটের এই পুরনো অভিযোগগুলো নতুন করে সামনে এসেছে। এই বিষয়টি উড়োজাহাজের নিরাপত্তা এবং প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির দায়বদ্ধতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলছে। উড়োজাহাজের এই দুর্ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধানে বার্নেটের অভিযোগগুলো কতটা প্রভাব ফেলবে, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
সূত্র: আজকাল (আইএন)
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল