পবিত্র ঈদুল আজহার দীর্ঘ ১০ দিনের সরকারি ছুটিতে রয়েছে দেশ। রাজধানীর ১ কোটির বেশি মানুষ পরিবারের সঙ্গে গ্রামে ঈদ উদ্যাপনে গেছেন। ঈদ শেষে কিছু মানুষ ঢাকায় ফিরলেও এখনো অধিকাংশই আসেননি। এদিকে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বাসাবাড়ির আঙিনা, সানসেটের ওপর, বারান্দা বা ছাদে পানি জমে এডিস মশার বংশবিস্তার বেড়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। সঙ্গে বেড়েছে মশার উপদ্রবও। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী। নানা কারণেই এবার ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডেঙ্গু সংক্রমণের ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা, এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিশেষজ্ঞরা। তাদের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার প্রতি ১৫টি বাড়ির মধ্যে গড়ে সাত থেকে আটটিতেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। যা ব্রুটো লার্ভা ইনডেক্স অনুযায়ী আশঙ্কাজনকভাবে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার জানান, ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ে তৈরি তাদের কম্পিউটার ভিত্তিক পূর্বাভাস মডেলে দেখা যাচ্ছে, এ বছর ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ ভয়াবহ আকার নিতে পারে। তিনি বলেন, এডিস মশার ঘনত্ব, রোগীর সংখ্যা, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাতের তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা একটি ফরকাস্টিং মডেল তৈরি করেছি। এতে দেখা যাচ্ছে, যদি এখনই এডিসের প্রজননস্থল ধ্বংসে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেড়ে যাবে। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে টানা কর্মসূচি পালন করায় বন্ধ হয়ে যায় সংস্থাটির সব ধরনের সেবা কার্যক্রম। বিশেষ করে ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ পুরাই অচল হয়ে পড়ে। টানা ২০ দিন নগর ভবন ও আঞ্চলিক কার্যালয় বন্ধ থাকায় মশার ওষুধ সরবরাহ করতে পারেনি সংস্থাটি। এতে মশককর্মীরা ওষধ স্প্রে করতে পাপ্রণনি। এ ছাড়া ঈদের ছুটিতে ছিলেন মশককর্মীরা। সব মিলিয়ে প্রায় এক মাস ওষুধ স্প্রে করপ্রেণা পারায় মশার উপদ্রুত বেড়ে যায় ভয়াবহভাবে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মশককর্মীরা নিয়মিত ওষুধ স্প্রে করলেও কমেনি মশার উৎপাত। বাসাবাড়ি, দোকানপাট সবখানে মশা। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ উত্তরের বাসিন্দারাও।
বনশ্রী এইচ ব্লকের বাসিন্দা সাদমান আদিল বলেন, বাসার ভিতরে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ আমরা। কয়েল জ্বালিয়ে এবং মশারির ভিতরেও মশার যন্ত্রণায় থাকা যায় না। আর বাইরেও রাস্তায় দাঁড়াতে পারি না। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ আমরা। প্রায় মাসখানেক এ এলাকায় মশার ওষুধ স্প্রে করতে কাউকে দেখিনি। কী করছে সিটি করপোরেশন?
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চাপ বাড়ছে। মহাখালীর ডিএনসিসি হাসপাতালসহ অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছে নতুন রোগী। যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম জানান, ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। ডাক্তার ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গতকালও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ১০৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের ১২ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৪১১ জন। এ সময়ের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের।
কীটতত্ত্ববিদ ও রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মশার ওষুধ এখন ডাবল স্প্রে করলেও তেমন একটা সুফল পাওয়া যাবে না। এখন সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে এডিস মশার জন্মস্থান ধ্বংস করা। একই সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিহ্নিত করে সেই সব বাসায় অভিযান পরিচালনা করে আশপাশে ওষুধ স্প্রে করা। তাহলে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। যেহেতু এখন পিক সিজন নয়, সে জন্য বাসাবাড়ি পরিষ্কার এবং সচেতনতা মুখ্য বিষয়। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন বলেন, ঈদের আগে ২০ দিনের মতো নগরভবন ও আঞ্চলিক কার্যালয় অবরুদ্ধ থাকায় আমরা মশার ওষুধ সরবরাহ করতে পারিনি। ঈদের আগের বুধবার আন্দোলন শিথিল হওয়ায় ওইদিন ওষুধ সরবরাহ করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঈদের দিনসহ মোট চার দিন মশককর্মীদের ছুটি থাকায় ওষুধ স্প্রে বন্ধ ছিল। তবে এখন থেকে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এখন আমরা ডাবল ওষুধ স্প্রে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি, খুব দ্রুতই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।