বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রি কান্ট্রি রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট (বিআইসিআরএ) প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস বিশ্বের তিন বৃহৎ ক্রেডিট রেটিং সংস্থার একটি।
গত ১৬ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসঅ্যান্ডপি বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতকে ৯.০ স্কোর দিয়েছে। এ স্কোর ১.০ থেকে ১০.০ এর মধ্যে মাপা হয়, যেখানে ১.০ সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১০.০ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এ হিসেবে বাংলাদেশ এখন এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকিং ব্যবস্থার দেশের তালিকায়, যেখানে আরও রয়েছে মঙ্গোলিয়া, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের এ অবস্থানের পেছনে প্রধানত অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, বিশেষ করে কিছু শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের শাসনব্যবস্থায় ব্যর্থতা, তারল্য সংকট ও ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি দায়ী।
২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিক এবং ২০২৪ সালের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক কমপক্ষে চারটি ইসলামি ব্যাংকে হস্তক্ষেপ করে। ওইসব ব্যাংকে অভ্যন্তরীণ লেনদেন, তারল্য ঘাটতি ও জালিয়াতির অভিযোগে শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হয়, বোর্ড পুনর্গঠন করা হয় এবং জরুরি তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, আমরা ব্যাংকিং ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শরিয়াভিত্তিক কিছু ব্যাংকে আমাদের হস্তক্ষেপ ছিল জনআস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য অত্যাবশ্যক।
তবে চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও রিপোর্টে ‘অর্থনৈতিক ঝুঁকির ধারা (ইকোনমিক রিস্ক ট্রেন্ড)’ সূচকে বাংলাদেশ ‘স্থিতিশীল (স্ট্যাবল)’ অবস্থানে রয়েছে। একই সঙ্গে ‘অর্থনৈতিক ভারসাম্য (ইকোনমিক ইমব্যালেন্স)’ এবং ‘সিস্টেম-ওয়াইড ফান্ডিং’ সূচকেও তুলনামূলক ভালো অবস্থান রয়েছে।
এদিকে সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া ও হংকং পেয়েছে ২.০ স্কোর, যা নির্দেশ করে একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল ব্যাংকিং পরিবেশ। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া রয়েছে ৩.০ স্কোরে। এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর তদারকি আমাদের বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে, আমানত প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ও প্রবাসী আয় বজায় রাখতে সহায়তা করছে।’ তবে তিনি সতর্ক করেন, ‘বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি না বাড়ালে অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে না এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিও বাধাগ্রস্ত হবে।’
অন্যদিকে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সাম্প্রতিক সংস্কারগুলো আশা জাগানিয়া হলেও টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন কাঠামোগত পরিবর্তন। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ করপোরেট শাসনব্যবস্থা ও রাজনৈতিক প্রভাব দূর না করলে ব্যাংকিং খাত কাঙ্ক্ষিত স্থিতিশীলতা পাবে না। তারা উল্লেখ করেন, গত ১৬ বছরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক খাত নানা অনিয়মের শিকার হয়েছে, যার প্রভাব এখনো বিদ্যমান।