আগামীকাল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে মতামত নেওয়া শেষ করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গতকাল বিকালে ৩০টি রাজনৈতিক দলের কাছে এ নিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটাই হতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের শেষ বৈঠক। এরই মধ্যে কমিশন সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বৈঠক করেছে। তাদের মতামত নিয়েছে। কমিশন তাদের কয়েকটি মতামত গ্রহণ করে সুপারিশ আকারে অন্তর্বর্তী সরকার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠাবে। অন্যদিকে চূড়ান্ত জুলাই সনদের কপি বৃহস্পতিবার দলগুলোকে দেওয়া হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব তথ্য জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, দলগুলোর সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আলোচনা শেষ করেছি।
বৃহস্পতিবার বৈঠকের পর বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন কি না ভেবে দেখা হবে। কমিশনের মেয়াদ বাড়ছে কি না- এ প্রশ্নে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আমি জানি কমিশনের মেয়াদ আর বাড়ছে না। জুলাই সনদ প্রণয়নে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত ১২ ফেব্রুয়ারি গঠিত সাত সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করে। ছয় মাস মেয়াদ শেষে কমিশনের মেয়াদ আরও এক মাস বাড়ানো হয়। এ হিসেবে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে প্রস্তাবিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ এ বেশকিছু পরিবর্তন এনেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামী প্রস্তাবিত সাংবিধানিক আদেশের বিষয়ে অধিকাংশ আইন বিশেষজ্ঞ একমত হয়েছেন বলে জানা গেছে। কমিশন জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা ও বিতর্ক এড়াতে সনদে অঙ্গীকারে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাস্তবায়ন পদ্ধতি মূল সনদে না রেখে আলাদাভাবে সরকারকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ২০ মার্চ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত দুই দফায় ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে। সেসব আলোচনা থেকে প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে ১৬ আগস্ট জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর খসড়া উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ভূমিকা, ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের তালিকা এবং একটি অঙ্গীকারনামা রয়েছে।
অঙ্গীকারনামায় জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপর প্রাধান্য দেওয়া, সনদের বৈধতা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না এবং সনদের ব্যাখ্যার ভার সুপ্রিম কোর্টের ওপর দেওয়াসহ মোট আটটি বিষয়ে অঙ্গীকার করার কথা উল্লেখ ছিল।
তবে এ তিনটি বিষয়ে বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের জোরালো আপত্তি ছিল। সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় এ তিনটি ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আনা হয়েছে। জুলাই সনদকে সংবিধানের তফসিল হিসেবে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।