গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এটি এ উপত্যকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশের সমান। গত শুক্রবার ইসরায়েলের হারেৎজ পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নিহত ফিলিস্তিনির এ সংখ্যা হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি। এ মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৩০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। হারেৎজ বলছে, ইসরায়েলি হামলায় সরাসরি নিহত হওয়ার পাশাপাশি বহু মানুষ পরোক্ষ কারণেও প্রাণ হারিয়েছেন, যেমন অনাহার, ঠান্ডা ও রোগে ভুগে। যুদ্ধের কারণে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। পত্রিকাটি লিখেছে, ‘গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মৃতের সংখ্যা নিয়ে ইসরায়েলি মুখপাত্র, সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবশালীরা সাধারণত তাচ্ছিল্য প্রকাশ বা এগুলো অতিরঞ্জিত বলে দাবি করেন। তবে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের ক্রমবর্ধমান একটি অংশ বলছেন, এ তালিকা শুধু নির্ভরযোগ্যই নয়; বরং বাস্তবতার তুলনায় হয়তো অনেকটাই রক্ষণশীল।’ হারেৎজের প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের হোলোওয়ে কলেজের অর্থনীতিবিদ ও সহিংস সংঘাতে মৃত্যুর বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গবেষক অধ্যাপক মাইকেল স্পাগাটের একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
গবেষণাটিতে গাজার প্রায় ১০ হাজার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে ২ হাজার পরিবারের ওপর জরিপ চালানো হয়। এর ভিত্তিতে জানা গেছে, চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৭৫ হাজার ২০০ মানুষের সহিংস মৃত্যু হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন।
হারেৎজ বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের অন্যান্য প্রায় সব সংঘাতের সঙ্গে তুলনা করলে এ সংখ্যা ব্যতিক্রমী।
অধ্যাপক স্পাগাট বলেন, এই তথ্য গাজা যুদ্ধকে ‘একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম রক্তক্ষয়ী সংঘাত’ হিসেবে চিহ্নিত করে। তিনি আরও বলেন, ‘সিরিয়া, ইউক্রেন ও সুদানে যুদ্ধে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা গাজার তুলনায় হয়তো বেশি। কিন্তু সাধারণ মানুষ ও যোদ্ধাদের মৃত্যুর হার এবং জনসংখ্যা অনুপাতে মৃত্যুর হারে গাজা সম্ভবত শীর্ষে।’ আমার ধারণা, গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশ এরই মধ্যে নিহত হয়েছে। একুশ শতকে মৃত্যুর এমন হার আর কোনো সংঘাতে দেখা যায়নি।
এক সপ্তাহের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি-ট্রাম্প : মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি সম্ভব বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে স্থানীয় সময় শুক্রবার কঙ্গো-রুয়ান্ডা চুক্তি নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। ট্রাম্প বলেন, ‘কয়েকজনের সঙ্গে মাত্রই কথা হলো। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই একটি যুদ্ধবিরতি পেতে যাচ্ছি বলে আমরা মনে করছি। গাজায় যুদ্ধবিরতি এক সপ্তাহের মধ্যেই হতে পারে।’ তিনি জানান, তার বিশ্বাস- গাজায় যুদ্ধবিরতি এখন খুব কাছাকাছি অবস্থায় রয়েছে। এ সংঘাত বন্ধে যারা কাজ করছেন, তাদের কয়েকজনের সঙ্গে সদ্যই তার কথা হয়েছে। এদিকে যুদ্ধবিরতি বিষয়ে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস বলেছে, যুদ্ধ শেষ করার যেকেনো চুক্তির আওতায় গাজায় থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে তারা প্রস্তুত। তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুদ্ধ তখনই শেষ হবে, যখন হামাসকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র ও বিলুপ্ত করা যাবে। অবশ্য হামাস অস্ত্র সমর্পণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।