জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ইসলামবিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা করে এনসিপি। আবার ধর্মীয় উগ্রতা বা চরমপন্থাও সমর্থন করে না। এনসিপি সেক্যুলারিস্ট (ধর্মনিরপেক্ষতা) বা ধর্মতান্ত্রিক কোনো মতবাদই আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করে না। এনসিপি জাতি, ধর্ম বা গোত্রভিত্তিক পরিচয়ের পরিবর্তে সভ্যতাগত জাতীয় পরিচয় ধারণ করে। গতকাল ‘কয়েকটি বিষয়ে এনসিপির দৃষ্টিভঙ্গি’ শিরোনামে দেওয়া ফেসবুক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম সাতটি আলাদা অনুচ্ছেদে দেশের ধর্মীয় কাঠামো, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি, ভারতের আধিপত্যবাদ, দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের বিষয়ে এনসিপির দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান ভিত্তি হলো মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সাম্য, ইনসাফ ও মানবিক মর্যাদার আদর্শ এবং চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানের বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষা ধারণ করেই এনসিপির পথচলা। এ ছাড়া আমরা বাংলার হিন্দু-মুসলমান-দলিতের উপনিবেশবিরোধী ও ব্রাহ্মণ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের ধারাবাহিকতা রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করি। তিনি বলেন, এনসিপি নাগরিকের ধর্মবিশ্বাস ও আত্মিক অনুভবের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্ম ইসলাম, তার নৈতিকতা ও মানবিকতা এবং বাঙালি মুসলমানের ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনচর্চা এনসিপি মূল্যায়ন করে। সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে এনসিপি। এনসিপি মনে করে রাষ্ট্রের উচিত প্রতিটি জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অখ তা রক্ষা করা। এনসিপি ইসলামবিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা করে এবং ধর্মীয় উগ্রতা বা চরমপন্থা সমর্থন করে না। এনসিপি সেক্যুলারিস্ট বা ধর্মতান্ত্রিক কোনো মতবাদই আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করে না; বরং ধর্মীয় সহাবস্থান, সম্প্রীতি ও দায়-দরদ অনুশীলনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়াই এনসিপির লক্ষ্য। এনসিপি জাতি, ধর্ম বা গোত্রভিত্তিক পরিচয়ের পরিবর্তে সভ্যতাগত জাতীয় পরিচয় ধারণ করে। বহু ভাষা ও সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র বঙ্গীয় ব-দ্বীপের সভ্যতাগত পরিচয় ধারণ করে জাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তুলবে এনসিপি। নারীদের নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, নারীর মর্যাদা ও ক্ষমতায়ন এনসিপির অন্যতম মূলনীতি। নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, নেতৃত্ব ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতে এনসিপি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। পারিবারিক আইনের আওতায় সম্পত্তিতে নারীর ন্যায্য অধিকার আদায়ে এনসিপি কাজ করবে।
প্রতিবেশী দেশ ভারত সম্পর্কে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদ বাংলাদেশের জন্য একটি সাংস্কৃতিক ও ভূরাজনৈতিক হুমকি। এনসিপি এ আধিপত্যবাদী প্রবণতার বিরুদ্ধে কঠোর রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করবে। এনসিপি মনে করে বাংলাদেশের উচিত ন্যায্যতা, মর্যাদা, সভ্যতা ও জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বৃদ্ধি করা। তিনি বলেন, এনসিপি বৈষম্যহীন ইনসাফভিত্তিক দুর্নীতিমুক্ত একটি আর্থসামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায় যা একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের অনুরূপ হবে। শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, কৃষি, জলবায়ু, নগর ব্যবস্থাপনা, শ্রম অধিকার ও কর্মসংস্থান হবে এনসিপির প্রধান নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্র। বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে বাংলাদেশ কেন্দ্র করে একটি নতুন অর্থনৈতিক জোন তৈরির ভিশন আছে এনসিপির।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, এনসিপি বিশ্বাস করে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়তে হলে রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠন, প্রতিষ্ঠান সংস্কার এবং নতুন সংবিধান প্রণয়ন জরুরি। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করা এনসিপির প্রধানতম রাজনৈতিক কর্তব্য। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের জন্য প্রথম ধাপটি হচ্ছে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন।