দাবি আদায়ে আন্দোলনে অনড় অবস্থানে রয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একই সঙ্গে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য শাটডাউন ঘোষণা করা হয়েছে ক্যাম্পাস।
প্রথম দিন তিন দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে গেলেও গতকাল দিনব্যাপী প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে কাকরাইল সড়কে অবস্থান নিয়ে চার দফা দাবিতে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেন তারা। আন্দোলনকারীদের নতুন দাবি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা।
এদিকে গত ১৪ মে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলার ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কালো দিবস ঘোষণা করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমিতির নেতারা। একই সঙ্গে আজ (শুক্রবার) সকাল ১০টায় সমাবেশ করবে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। জুমার নামাজের পরে গণ অনশনে বসবেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল থেকে ক্যাম্পাসে ২৫টি বাস নিয়ে চক্রাকারে ঘুরে আন্দোলনে যোগ দেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরাও। অনেকে খাওয়ার পানি, স্যালাইন, বিস্কুট, কলা, রুটি, দুপুরের খাবারসহ আর্থিক সহযোগিতা করেন তাদের। আজ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান আন্দোলনে উপস্থিত হলে সব বিভাগের শিক্ষার্থীরা সেমিস্টারের এটেনডেন্ড পাবে বলে ঘোষণা দিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদদীন বলেন, ‘আমাদের আগে দাবি ছিল তিনটা, এখন চারটা দাবি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাস শাটডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা চলবে না এ সময়ে। আমরা এখানে অধিকার নিয়ে এসেছি। যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য এসেছি। আমাদের ওপর নির্বিচারে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। এটি সম্পূর্ণ অরাজকতা এবং অন্যায়। আমরা কারও বিরুদ্ধে এখানে কথা বলতে আসিনি। কোনো ষড়যন্ত্র করতে আসিনি। আমাদের অধিকার চাইতে, দাবি আদায় করতে এসেছি। দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরব না। আমাদের রক্তের ওপরে দাঁড়িয়ে উপদেষ্টা মাহফুজ চেয়ারে বসেছে, সেটা ভুলে গেলে চলবে না। উপদেষ্টা মাহফুজসহ সরকারকে এ হামলার ঘটনায় ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান বিন হাদি। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাবার সমান শিক্ষকের ওপর হামলা করার পরও সরকার দুঃখ প্রকাশ করেনি। এ ঘটনায় শিক্ষক সমাজ লজ্জিত। আমরা দ্রুত সময়ে ইন্টেরিমকে বলব জবি শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়ে হামলার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার নিশ্চিত করুন। এ ক্যাম্পাসে ছাত্রদল-শিবিরসহ সব ছাত্রসংগঠন ঐক্যবদ্ধ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে যাবেন না। আমরাও পাশে রয়েছি।’ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, ‘আমরা গতকাল থেকে একটানা কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি কিন্তু সরকার বা কারও টনক নড়ছে না। আমরা তো কোনো দয়া বা ভিক্ষা চাইতে আসেনি। আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে এসেছি। প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে কোথাও যাব না।’
এর আগে বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে তিন দফা দাবি আদায়ে ক্যাম্পাস থেকে ‘লংমার্চ টু যমুনা’ নিয়ে আসেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ সময় পথে পথে পুলিশের সব ব্যারিকেড ভেঙে এলেও কাকরাইল মসজিদের সামনের ব্যারিকেডে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান, লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমকর্মীসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন বলে জানা গেছে। এরপর থেকে কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।