নিজ নিজ সমাজে অর্থবহ পরিবর্তন আনতে এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নে তরুণদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরও সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নরওয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরুণ নেতা-কর্মীর একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা তরুণদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করছি, না হলে তারা নীতিনির্ধারণে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারবে না।
সাক্ষাৎকালে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বাংলাদেশে তরুণদের সঙ্গে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তারা বলেন, অনেক বাংলাদেশি তরুণই তাদের জীবনে একবারও ভোট দিতে পারেননি। তারা জানতে চান, তরুণদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নতুন সরকারের প্রধান অঙ্গীকারই হলো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। ১৫ বছর ধরে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। টানা তিন মেয়াদে একটি ভুয়া ভোটব্যবস্থা চালু ছিল। কর্তৃপক্ষ একে বিশাল সাফল্য বললেও বাস্তবে কেউই ভোট দিতে পারেনি। তরুণদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার অত্যাবশ্যক।
দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে ‘সেকেলে’ আখ্যা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আগের রেখে যাওয়া বিশৃঙ্খলা পরিষ্কার করা। ধ্বংসস্তূপ থেকে টুকরোগুলো তুলে নিয়ে নতুন সূচনার জন্য একটি নতুন কাঠামো তৈরি করাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ। এটি আমাদের জন্য একটি রূপান্তরকাল। আমি শুধু আশা করি এ রূপান্তর দ্রুত শেষ হবে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কানাডার ইন্দো-প্যাসিফিক বাণিজ্য প্রতিনিধির সাক্ষাৎ : প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কানাডার ইন্দো-প্যাসিফিক বাণিজ্য প্রতিনিধি মি. পল থোপিল সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তাঁদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উভয় পক্ষ দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও গভীর করার এবং বিনিয়োগের সুযোগ সম্প্রসারণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন। বাংলাদেশে পল থোপিলের দ্বিতীয় সরকারি সফর এটি। সফরে তিনি বেল হেলিকপ্টার, ব্ল্যাকবেরি, গিল্ডান অ্যাকটিভওয়্যার, জেসিএম পাওয়ার, অ্যাডভানটেক ওয়্যারলেস কমিউনিকেশনসসহ কানাডার কিছু স্বীকৃত কোম্পানির ঊর্ধ্বতন নির্বাহীর সমন্বয়ে গঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। থোপিল বলেন, আমরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনায় বিশ্বাস করি। এজন্যই আমি আমার সঙ্গে ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের নিয়ে এসেছি। কারণ আমরা আরও শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। ড. ইউনূস বলেন, আমরা একটি জঞ্জাল পরিষ্কার করার চেষ্টা করছি। অসম্ভব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা গুরুতর সংস্কারের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এ অগ্রযাত্রায় আমাদের পাশে আপনার মতো বন্ধুদের প্রয়োজন। প্রধান উপদেষ্টা কানাডিয়ান বিনিয়োগকারীদের শিল্প সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতি এবং একটি আঞ্চলিক রপ্তানি কেন্দ্র হিসেবে এর সম্ভাবনা তুলে ধরেন।
কানাডিয়ান প্রতিনিধিদলের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিং, কানাডার হাইকমিশনের সিনিয়র ট্রেড কমিশনার ডেব্রা বয়েস, বেল হেলিকপ্টারের বাণিজ্যিক বিক্রয় ব্যবস্থাপক উইলিয়াম ডিকি, ব্ল্যাকবেরির সরকারী সমাধান প্রধান ব্র্যাড কলওয়েল, রপ্তানি উন্নয়ন কানাডার দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান প্রতিনিধি লাডিসলাউয়া পাপারা, গিলডান অ্যাকটিভওয়্যারের ভাইস প্রেসিডেন্ট জুয়ান কনট্রেরাস, জেসিএম পাওয়ারের এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক মো. আলী, এবং অ্যাডভানটেক ওয়্যারলেস কমিউনিকেশনসের গ্লোবাল সেলসের ভাইস প্রেসিডেন্ট টনি র্যাডফোর্ড।