‘বাসায় কোনো টেলিভিশন নেই। নোভা-শীলা টেলিভিশন দেখার জন্য পাশের ফ্ল্যাটে যায়। এক রাতের কথা। মেয়েরা খুব আগ্রহ করে টিভি দেখতে গিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে এসে জানাল, ওই ফ্ল্যাটে মেহমান এসেছে বলে আজ টিভি দেখতে দেওয়া হবে না। বাচ্চারা খুবই মন খারাপ করল। রাতে ভাত খেতে বসে বড় মেয়ে বলল- ‘বাবা, তুমি আমাদের একটি রঙিন টিভি কিনে দেবে?’ এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারলাম না। তবে একটি রঙিন টিভি যেভাবেই হোক কিনতে হবে এটি মাথায় ঢুকে গেল। তখন বিটিভির নওয়াজিশ আলি খান আমাকে একটি ধারাবাহিক নাটক লিখতে বলেছেন। আমি রাজি হলাম। ঠিক করলাম, একটি রঙিন টিভি কিনতে যত টাকা লাগে তত টাকার ধারাবাহিক নাটক লেখা হবে। যে নাটকটি লিখলাম তার নাম- ‘এইসব দিনরাত্রি’। নাটকটির পরিচালক ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। আমার রঙিন টিভি কেনার টাকা হওয়া মাত্র আমি নাটকের একটি চরিত্র টুনির মৃত্যু দিয়ে নাটক শেষ করে দিলাম। এ নাটকটির প্রতি আমি নানাভাবে ঋণী। নাটকটির কারণে আমি আমার বাচ্চাদের একটি শখ মেটালাম। রঙিন টিভি কিনলাম।’ জীবদ্দশায় জনপ্রিয় ‘এইসব দিনরাত্রি’ সৃষ্টির গল্প এভাবেই বয়ান করে গিয়েছিলেন এর রচয়িতা কলমের জাদুকর খ্যাত প্রখ্যাত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ।
হঠাৎ হুমায়ূনের নাটক বন্ধের সিদ্ধান্তে আহত হয়েছিলেন অভিনয়শিল্পী এবং দর্শকরা। শিল্পীরা তখন হুমায়ূন আহমেদকে জানিয়েছিলেন- ‘আমরা এত আগ্রহ আর আনন্দ নিয়ে নাটকটিতে কাজ করছি, আর আপনি এককথায় লেখা বন্ধ করে দিলেন। আপনি আমাদের ছোট করেছেন।’ সব শুনে হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, ‘আমি তো কাউকে ছোট করি নাই। আমি সত্য কথা বলেছি। টেলিভিশন কিনব বলেই নাটক লিখেছিলাম।’