পতিত স্বৈরাচার সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নির্বিচারে অপকর্মের নখদন্ত বসিয়েছিল। বিরোধী দল-মত দমনে এমন কোনো অনৈতিক পদক্ষেপ বা নিষ্ঠুরতা নেই- যা করেনি। ক্রমে সেসবের তথ্য-উপাত্ত উন্মোচিত হচ্ছে দেশিবিদেশি অনুসন্ধানে। টেকগ্লোবাল ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এক ভয়ংকর তথ্য। ২০১৫ থেকে পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে গোপনে দেশে প্রায় সোয়া ২ হাজার কোটি টাকা মূল্যের দেড় শতাধিক নজরদারি প্রযুক্তি এবং স্পাইওয়্যার আমদানি ও ব্যবহৃত হয়। বিরোধীদলীয় রাজনীতিক, গণমাধ্যমকর্মী, সমাজমাধ্যমের অ্যাক্টিভিস্ট, এমনকি সাধারণ নাগরিকদের ওপর নজরদারির জন্যও এগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। নজরদারির লাগসই হাতিয়ার হিসেবে এগুলোর ব্যাপকভিত্তিক ব্যবহার করা হয় বিশেষত বিভিন্ন গণবিক্ষোভ এবং নির্বাচনের সময়। টেকগ্লোবাল
বলছে- ২০০১-এ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলা এবং ২০১৬ সালে ঢাকার হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর সন্ত্রাস দমনের অজুহাতে দেশে এ ধরনের নজরদারির বিস্তার ঘটে। এক দশকে এটা ঔপনিবেশিক আমলের পুলিশিং ঐতিহ্য থেকে আধুনিক সাইবারভিত্তিক নেটওয়ার্কে রূপান্তরিত হয়। বাংলাদেশ যে ধরনের প্রযুক্তি আমদানি করেছে, সেগুলো যথেষ্ট বিস্তৃত এবং প্রায়ই পরোয়ানা ছাড়া নজরদারির সুযোগ করে দেয়। প্রতিবেদনে আরও যে ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তা হলো- প্রযুক্তিগুলোর জন্য ১৯০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৪০ মিলিয়নই খরচ করা হয়েছে- আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক না থাকা ইসরায়েলি উৎস থেকে আনা প্রযুক্তির জন্য। কূটকর্মে পারঙ্গম এগুলোর অধিকাংশই অন্যান্য দেশে স্বৈরশাসকরাই ব্যবহার করে। বিগত দিনগুলোতে বাংলাদেশের আওয়ামী স্বৈরশাসক বিভিন্ন বাহিনীতে তার অনুগতদের দিয়ে ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে এগুলোর যথেচ্ছ অনৈতিক ব্যবহার করেছে। দেশে নজরদারি ব্যবস্থার এ বিস্তারের পেছনে রয়েছে আইনি দুর্বলতা। এ ক্ষেত্রে কোনো সংসদীয় তদারকি, বিচারিক সম্পৃক্ততা বা জবাবদিহির ব্যবস্থা নেই। ফলে রাষ্ট্রীয় নজরদারি ব্যবস্থা জনগণের সুরক্ষার পরিবর্তে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং ভিন্নমত দমনের হাতিয়ারে পরিণত হয়। অথচ নাগরিকের মৌলিক মানবিক মর্যাদা ও গোপনীয়তা লঙ্ঘনে এ এক জঘন্য হস্তক্ষেপ। এই অপচর্চা বন্ধ হওয়া জরুরি।
তার জন্য চাই- আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার।