একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা তাকিয়ে আছেন বলে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন বিজিএমইএর নবনির্বাচিত সভাপতি ও রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বাবু।
প্রশ্ন : জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে বৈঠকের পর দেশবাসী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে আপনার মতামত কী?
মাহমুদ হাসান খান : গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হবে, তা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ততই মঙ্গল বয়ে আনবে। ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা সেদিকেই তাকিয়ে আছেন। এটা যত দ্রুত কার্যকর হবে, দেশের অর্থনীতির জন্য ততই মঙ্গল।
আমাদের প্রত্যাশা, এটা যেন কোনো কূটকৌশলে বাধাগ্রস্ত না হয়।
প্রশ্ন: এমন আশঙ্কা কেন করছেন?
মাহমুদ হাসান খান : কাঙ্ক্ষিত বৈঠকের পর নির্বাচন নিয়ে এই মুহূর্তে তেমন কিছু বলার সময় না হলেও ইসরায়েল-ইরান সংঘাত নতুন করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি করছে। এর ফলে সামনে অর্থনীতিতে একটা বড় ধরনের সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে আমদানি-রপ্তানি ও পরিবহন ব্যয় বাড়বে।
এমন সংকট নির্বাচিত সরকার ছাড়া মোকাবেলা করা কঠিন।
প্রশ্ন : সম্প্রতি বিজিএমইএ নির্বাচন হয়ে গেল। এতে আপনাদের ফোরামের ভূমিধস বিজয় হয়েছে। এই ম্যাজিকের রহস্য কী?
মাহমুদ হাসান খান : বিজিএমইএ সদস্যরা একটা পরিবর্তন চেয়েছিলেন।
আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপ সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্ব দীর্ঘদিন ধরে দেখেছে। তাই এ নির্বাচনে আমাদের নেতৃত্বে ফোরামের প্রতি তাদের আস্থার বহিঃপ্রকাশ হয়েছে। এ ছাড়া অতীতের নির্বাচনগুলোতে অনেক অনৈতিক চর্চা হয়েছে। এগুলোকে তারা ভালোভাবে নেয়নি। ফলে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
প্রশ্ন : তাদের বিশাল আস্থা মূল্যায়নে আপনাদের পরিকল্পনা কী?
মাহমুদ হাসান খান : আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নই হবে এখন প্রধান কাজ। আর একটি দল যখন অঙ্গীকার করে, তখন তাদের কাজ হলো এসব পূরণ করা। পুরোটা করতে না পারলেও বেশির ভাগ বাস্তবায়ন করা।
প্রশ্ন : এর মধ্যে প্রধান অগ্রাধিকার কাজগুলো কী হবে?
মাহমুদ হাসান খান : প্রথম কাজই হবে ব্যবসায় খরচ কমানো। এ জন্য আমরা নিজেদের ঘর থেকেই (বিজিএমইএ) শুরু করেছি। সেটা হলো বিজিএমইএর যাবতীয় সেবা খরচ ২৫ শতাংশ কমানো। এ জন্য সংগঠনের আয় কমলেও অপচয় কমিয়ে সমন্বয় করা হবে। আর হচ্ছে ঝরে যাওয়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য কাজ করা। আরেকটা হলো জ্বালানি সমস্যা। এটা তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর নির্ভরশীল এবং দেশের অভ্যন্তরীণ গ্যাস যত দ্রুত আহরণ করা যায়, এ জন্য সরকারের ওপর চাপ তৈরি করা। আমদানির জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা, যাতে হঠাৎ করে ঘাটতি না হয়। এ ছাড়া ভোলার গ্যাসকূপ থেকে দ্রুত জাতীয় সঞ্চালন লাইনে গ্যাস নিয়ে আসা। ব্যাংকের সুদের হার কমানো। কাস্টমসের হয়রানি বন্ধ করার জন্য নিরীক্ষা পদ্ধতি স্বয়ংক্রিয় বা আরো সহজতর করা।
প্রশ্ন : এটা তো এলডিসিসংক্রান্ত নীতিমালার পরিপন্থী। এটা কিভাবে সমন্বয় করা হবে?
মাহমুদ হাসান খান : এটা নিয়ে বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দ্বিমত আছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দুবাইয়ে একটি মিটিং হয়েছিল, এতে উন্নত দেশগুলো আপত্তি করবে না বলে আশ্বস্ত করেছে।
প্রশ্ন : মোটা দাগে আপনাদের পরিকল্পনার কথা বলেছেন। এই মুহূর্তে আপনি কোন তিনটি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেবেন?
মাহমুদ হাসান খান : প্রথম অগ্রাধিকার জ্বালানি, তারপর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি শুল্ক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের লো কস্ট রিফাইন্যান্সিং।
প্রশ্ন : শ্রমিকদের জন্য কী থাকছে?
মাহমুদ হাসান খান : শ্রমিকদের আইনসম্মত দাবিদাওয়া পূরণের প্রক্রিয়া বিকেন্দ্রীকরণ। কোনো সমস্যা হলে যেন তারা বিজিএমইএ বা রাস্তায় নেমে না আসে এ জন্য স্থানীয়ভাবে সমস্যার সমাধান করা। মিরপুরে শ্রমিকদের জন্য তৈরি অসমাপ্ত হাসপাতালকে সবার আগে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
প্রশ্ন : এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন?
মাহমুদ হাসান খান : বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক সুবিধা নিতে শ্রম অধিকার ও মানবাধিকার বড় বাধা হতে পারে। তবে এগুলো নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে দেশটির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে সরকারের পাশাপাশি বিজিএমইএও কাজ করবে। স্থানীয় সমস্যাগুলো নিয়ে আমাদের পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে দর-কষাকষিসহ জোরালো তাগিদ থাকবে।
প্রশ্ন : আপনার মেয়াদের শেষ সময় ২০২৭ সালে বিজিএমইএকে কী অবস্থায় রেখে যেতে চান?
মাহমুদ হাসান খান : আমার আশা, নতুন বিনিয়োগ না হলেও বর্তমান সক্ষমতা দিয়ে আরো ১০ থেকে ১৫ শতাংশ রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হবে। এটা হবে অঙ্কে আর পরিমাণে হবে ৩০-৩৫ শতাংশ। এ জন্য বন্ধ কারখানাগুলো সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।