আর কদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদে ইসলাম ধর্মের বিধান মতে ধর্মপ্রাণ এবং অর্থিকভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তিরা পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। কোরবানির ঈদকে ঘিরে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার অর্থনীতিতে যোগ হবে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। ফলে এই অঞ্চলে অর্থনীতির চালিকা শক্তি নতুন গতি পাবে।
জানা গেছে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খামারি ও গৃহস্থরা গরু-ছাগল ও খাসি পালন করে থাকেন। কোরবানির ঈদের সময় এসব পশু বিক্রি করে তারা আর্থিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখেন। শুধু কোরবানির পশু নয় এসময় মসল্লা, লবণ ও পশুর চামড়াও অর্থনীতির খাতায় যোগ হয়।
প্রাণিসম্পদ দপ্তর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ঈদুল আজহায় রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ১৪ লাখ ১২ হাজারের বেশি পশু কোরবানি দেয়া হয়েছিল। এবার কিছুটা বেড়ে তা ১৫ লাখে দাঁড়াতে পারে। সূত্র মতে, মোট পশুর তিনভাগের এক ভাগ হচ্ছে গরু এবং দুই ভাগ হচ্ছে খাসি-ছাগল। সেই হিসেবে এবছর রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ৫ লাখ গরু এবং ১০ লাখ খাসি-ছাগল কোরবানি দেয়া হতে পারে।
রংপুর নগরীর লালবাগ, বুড়িরহাটসহ বেশ কয়েটি গরুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, ছোট সাইজের গরু ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা, মাঝারি সাইজের গরু একলাখ ২০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং বড় সাইজের গরু আড়াই থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় সাইজের গরুর চাহিদা খুবই কম। ছোট এবং মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি গরুর গড় মূল্য দেড় লাখ টাকা করে ধরা হলে পাঁচ লাখ গরুর বাজার মূল্য দাঁড়ায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। অপরদিকে প্রতিটি খাসি এবং ছাগল বিক্রি হচ্ছে ১২ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকায়। প্রতিটি ছাগল গড়ে ১৫ হাজার টাকা করে ধরা হলে সেই হিসেবে ১০ লাখ খাসি- ছাগলের দাম হচ্ছে সোয়া তিন হাজার কোটি টাকা। তথ্য মতে, প্রতিটি প্রাণীর গড়ে মসল্লা লাগে ৫০০ টাকার। সেই হিসেবে মসল্লা কেনা-বেচাতে যোগ হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা। অপরদিকে একটি গরুর চামড়া সংংরক্ষণ করতে লবণ লাগে ৮ কেজি এবং ছাগলের চামড়া সংরক্ষণ করতে লবণ লাগে তিন কেজি। গড়ে ৬ কেজি করে ধরা হলে চামড়া সংরক্ষণে লবণের প্রয়োজন পড়ছে ১০ লাখ কেজির ওপর। প্রতি কেজি লবণ ৩৫ টাকা করে ধরা হলে লবণে যোগ হচ্ছে ৩ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এছাড়া প্রতিপিছ গরুর চামড়া গড়ে এক হাজার টাকা করে বিক্রি হলে ৫ লাখ গরুর চামড়া বিক্রি হবে ৫০ কোটি টাকার। ছাগলের চামড়া গড়ে দেড় থেকে দুইশ টাকা বিক্রি হলে সেখান থেকে আসবে ১৫ কোটি টাকার বেশি। গবাদি পশু, মসল্লা, চামড়া ও লবণে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হবে।
গত রবিবার রংপুর নগরীর লালবাগ হাটে রফিকুল ইসলাম ২টি গরু বিক্রি করেছেন এক লাখ ৮০ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, সারা বছর গরু দুটিকে লালন পালন করেছেন কোরবানির ঈদে বিক্রি করার জন্য। গরু বিক্রির টাকা দিয়ে তিনি সংসারের বাড়তি কাজে লাগাবেন। তবে ক্রেতারা মনে করছে গত বছরের চেয়ে এবার গরুর দাম বেশি।
নগরীর খামারি শফিকুল মিয়া বলেন, গো-খাদ্যসহ সব খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় এবার তার লাভ কম হতে পারে। তবে তিনি আশা করছেন তার গরু ভাল দামেই বিক্রি হবে।
প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, ইতোমধ্যে বিভাগের ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ জন ছোট-বড় খামারির মাধ্যমে ১৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৯০টি গরু, মহিষ, ছাগল, উট, দুম্বা, ভেড়াসহ কোরবানির প্রাণী প্রস্তুত করেছেন। যা এই বিভাগের ৮ জেলায় মোট চাহিদার চেয়ে প্রায় ৫ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি।
রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডাক্তার মোহাম্মদ আব্দুল হাই সরকার জানান, আমাদের পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী এ বছর কোরবানির ঈদে রংপুরে বিভাগের অর্থনীতিতে যোগ হবে ১২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে গবাদি পশুতে যোগ হবে ১০ হাজার কোটি টাকা।
তিনি আরও বলেন সরকারের প্রণোদনাসহ বিভিন্নভাবে খামারি ও গৃহস্থদের উদ্বুদ্ধ করায় গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৫ লাখের বেশি গবাদি পশুর সংখ্যা বেড়েছে। এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি। এসব পশু দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো যাবে।
বিডি প্রতিদিন/এএ