মানিকগঞ্জে এ বছর পূজা মণ্ডপের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গতবছর জেলায় ৫১০টি মণ্ডপে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবার ৫৫৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় ৪৩টি বেশী।
লোকনাথ পঞ্জিকা থেকে জানা যায়, ২১ সেপ্টেম্বর (মহালয়া, পৃথিবীতে দেবী দুর্গার আগমন), ২৭ সেপ্টেম্বর মহা পঞ্চমী (পূজার প্রস্তুতি ও মন্ডপ তৈরি), ২৮ সেপ্টেম্বর মহা ষষ্ঠী, ২৯ সেপ্টেম্বর মহা সপ্তমী (মন্ডপ ভিত্তিক পূজা), ৩০ সেপ্টেম্বর মহা অষ্টমী (কুমারী পূজা), পহেলা অক্টোবর মহা নবমী (পূজা-হোম,আয়ুধ পূজা ইত্যাদি পালন করা হয়), ২ অক্টোবর, বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির শেষ পর্যায়ের কাজ। মাটি শুকানোর পর প্রতিমার অঙ্গে দেয়া হবে রঙের আঁচড়। রঙ শুকানোর পরই প্রতিমার অঙে শোভা পাবে বাহারি রঙের দামি বসন ও বিভিন্ন অলংকার। তখন প্রতিমাগুলো হয়ে উঠবে জ্যান্ত দেব-দেবীর প্রতিচ্ছবি। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরি এলাকার গঙ্গাচরণ মালাকার বাড়ির প্রতিমা জেলার অন্যতম প্রতিমা।
বানিয়াজুরী লোকনাথ কুঠিরের স্বত্বাধিকারী গঙ্গাচরণ মালকারের ভাই অমূল্য মালাকার বলেন, মানিকগঞ্জ হচ্ছে সম্প্রীতির জেলা। এ জেলার মানুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একে অপরের সাথে ভ্রাতৃত্ব সুলভ আচরণ করেন। তাদের বাড়িতে এবছর ৫২তম দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কখনোই এই লোকনাথ কুঠিরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অণির্বান কুমার পাল বলেন, এ বছর মানিকগঞ্জে ৫শ ৫৩ মন্দিরে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে মানিকগঞ্জ সদরে ৮৬, মানিকগঞ্জ পৌরসভায় ৩১, সাটুরিয়ায় ৭৯, সিংগাইর উপজেলায় ৬৩, সিংগাইর পৌরসভায় ১৪, হরিরামপুরে ৬৫, ঘিওরে ৮২, দৌলতপুরে ৪৬ এবং শিবালয়ে ৮৭ মন্দিরে দুর্গা পূজা হতে যাচ্ছে।
মানিকগঞ্জ জেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রণ্টের সাধারণ সম্পাদক গৌরাঙ্গ সরকার বলেন, আসন্ন দুর্গা পূজা উদযাপন উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠান সুন্দর ও নির্বিঘ্ন করতে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোছা. ইয়াছমিন খাতুন জানান, আসন্ন দুর্গা পূজা উপলক্ষ্যে মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের পূজা পরিচালনা কমিটির সাথে বসে মণ্ডপে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, সিসি ক্যামেরা ব্যবহার, উচ্চস্বরে গান বাজনা পরিহার, প্রয়োজনে ড্রোন ব্যবহারের নির্দেশনাসহ নিরাপত্তার জন্য তাদেরকে বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, দুর্গা প্রতিমা তৈরির পর্যায় থেকে প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই সরকার কর্তৃক প্রদত্ত আর্থিক সহায়তা প্রতিটি মন্দিরের কমিটির লোকজনের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও, কোনো মন্দিরে বাড়তি কোনকিছুর প্রয়োজন হলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার ব্যবস্থা করা হবে। বিজয়া দশমীর দিন সন্ধ্যা ৭টার আগে প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার জন্য প্রতিটি মন্দির কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ