স্বর্ণালঙ্কার লুট করার জন্য নওগাঁর পোরশা উপজেলার পোরশা পূর্ববাড়ি গ্রামে ভাই-বোনকে হত্যা করা হয় বলে আদালতে নুরুন্নবী (৩৫) নামে এক আসামি স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। নুরুন্নবী হত্যাকাণ্ডের শিকার রেজিয়া খাতুনের পাতানো ছেলে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে নওগাঁর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১১ এর বিচারক মো. আব্দুর রহমান ১৬৪ ধারায় আসামি নুরুন্নবীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। নওগাঁর পোরশা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম জবানবন্দি দেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গতকাল সোমবার টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বৈরাতলী ইউনিয়নের বেটুয়া পশ্চিপাড়া এলাকার একটি ফার্নিচারের দোকান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পোরশা থানা পুলিশ। এ সময় তাঁর কাছ থেকে লুট করা স্বর্ণালঙ্কার বিক্রির ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা জব্দ করে পুলিশ।
থানা-পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত নুরুন্নবী পোরশা উপজেলার বানমহন গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে। তিনি পোরশা সদরের গবিরাকুড়ি গ্রামে বিয়ে করে প্রায় একযুগ ধরে ঘরজামাই হিসাবে বসবাস করে আসছিলেন। উপজেলার পোরশা পূর্ববাড়ি গ্রামের নূর মোহাম্মদের (৫৫) বাড়িতে দীর্ঘদিন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। বাড়ি মালিক নূর মোহাম্মদের বোন রেজিয়া খাতুন (৫৮) স্বামী পরিত্যক্ত হওয়ায় এবং কোনো সন্তান না থাকায় ওই বাড়িতেই থাকতেন। নিজের কোনো সন্তান না থাকায় নুরুন্নবীকে ধর্ম ছেলে (পাতানো ছেলে) বানান রেজিয়া খাতুন। এ কারণে রেজিয়া খাতুন ও নূর মোহাম্মদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল তাঁর। বাড়িতে যাতায়াত করার সুবাদে রেজিয়ার কাছে বেশ কিছু স্বর্ণালঙ্কার দেখে লোভে পড়েন নুরুন্নবী। গত ৪ এপ্রিল নুরুন্নবীকে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ দেন রেজিয়া। নিমন্ত্রণ পেয়ে ওই সন্ধ্যায় রেজিয়ার বাসায় যান নুরুন্নবী। রাতের খাবার শেষ করার পর রেজিয়া, নূর মোহাম্মদ ও নুরুন্নবী একসঙ্গে বসে গল্প করেন।
এক পর্যায়ে নূর মোহাম্মদ তাঁর ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ১১টার দিকে নুরুন্নবী গল্প করার এক পর্যায়ে পেছন থেকে রশি দিয়ে রেজিয়ার গলা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে নূর মোহাম্মাদের ঘরে গিয়ে ঘুমন্ত নূর মোহাম্মদের মুখ চেপে ধরে তাঁর বুকে উপর্যুপরি চাকু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। ভাই-বোনকে হত্যার পর রেজিয়ার ঘরে থাকা প্রায় দুই ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যান নুরুন্নবী। পালিয়ে যাওয়ার বাড়ির সদর দরজা ভেতর থেকে ছিটকিনি দিয়ে আটকিয়ে প্রাচীর টপকে পালিয়ে যান নুরুন্নবী। নূর মোহাম্মদ ও রেজিয়া খাতুনকে হত্যার তিন দিন পর গত ৭ এপ্রিল অর্ধগলিত অবস্থায় তাঁদের লাশ উদ্ধার করে পোরশা থানা পুলিশ। এ ঘটনায় রেজিয়া ও নূর মোহাম্মদের বড় ভাই ফজলে আহম্মদ বাদী হয়ে পোরশা থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল