ভরা মৌসুমেও শরীয়তপুরে পদ্মা-মেঘনা নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে না। দিন-রাত নদীতে চষে বেড়ালেও জ্বালানি খরচ উঠছে না, বলছেন জেলেরা। এতে আর্থিক সংকটে পড়েছেন এ অঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার জেলে পরিবার। এদিকে ইলিশ সরবরাহ কম হওয়ায় স্থানীয় আড়তগুলোতেও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার পথে। নদীর নাব্য সংকট, চর জেগে ওঠা, পানিদূষণ, নিষেধাজ্ঞার সময় কারেন্ট জাল দিয়ে নির্বিচারে ছোট মাছ ও জাটকা ধরায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, বলছেন মৎস্য কর্মকর্তারা। সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতা দাবি করেছেন মৎস্যজীবীরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শরীয়তপুরের জাজিরা, নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ এবং গোসাইরহাট উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার জেলে পরিবার পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এর মধ্যে ৩১ হাজার ২৪০ দরিদ্র জেলে পরিবার। এ এলাকার প্রায় ৮০ কিলোমিটার নৌ-সীমানা থেকে আহরণ করা হয় ইলিশ। জেলার সবচেয়ে বড় মাছের আড়ত সুরেশ্বর ঘাটে অন্য বছর এ সময় প্রতিদিন ইলিশ মাছ সরবরাহ হতো ৬০ থেকে ৭০ মণ। সেখানে চলতি বছর মাত্র ৩ থেকে ৪ মণ ইলিশ সরবরাহ হচ্ছে। এতে স্থানীয় চাহিদাই মিটছে না। দামও বেশি। নদীর নাব্যসংকট, পানিদূষণ ও নিষেধাজ্ঞার সময় কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা ধরার কারণে এ বছর কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না, বলছেন তারা।
জেলে রহিম, কালাচান বলেন, আগে এ সময় প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেত সঙ্গে অন্যান্য মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু নদীতে পানি কম থাকার কারণে ইলিশ মাছের দেখা মিলছে না। এর ফলে আমাদের সংসারে অভাব অনটন লেগেই আছে। অনেকের কাছ থেকে কড়া সুদে ঋণ নিয়ে জাল ক্রয় করে মাছ ধরে থাকি। কিন্তু এখন সেই ঋণ ও সুদ দেব কীভাবে পরিশোধ করব সেই আশঙ্কায় আছি। সামান্য পরিমাণ মাছ পাই তা দিয়ে কোনোরকমে চাল-ডাল কিনে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। তাই সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতা দাবি করেছেন তারা। এদিকে মাছ কম থাকার কারণে দামও অনেক বেশি। ফলে ইলিশ অনেকটাই ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। আড়তে সরবরাহ সংকটের পাশাপাশি দাম বেশি হওয়ায় জাতীয় মাছের সাধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ক্রেতারা। ভেদরগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল ইমরান বলেন, সারা বছরই ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছি। বিশেষ করে জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় আমরা জেলেদের সচেতন করে আসছি। নদীর নাব্যসংকট, চর জেগে ওঠা, নদীর পানিদূষণ ও ইলিশের খাদ্য হ্রাস পাওয়ায় মিঠা পানিতে ইলিশের বিচরণ কমেছে। তার সঙ্গে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী, রিং ও কারেন্ট জাল দিয়ে নির্বিচারে ছোট-বড় মাছ ধরা হচ্ছে। ইলিশকে নিজের মাছ মনে করলেই উৎপাদন বাড়বে।