ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেড়েছে সীমান্ত হত্যা। এক বছরে ভারত সীমান্তবর্তী তিন উপজেলায় বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে সাত বাংলাদেশি হতাহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আতঙ্ক বাড়ছে সীমান্তঘেঁষা বাসিন্দাদের মাঝে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন করে মাদক চোরাকারবারি নিয়ন্ত্রণের নামে সীমান্তে হত্যা ঘটাচ্ছে বিএসএফ।
স্থানীয়রা জানান, কসবার বায়েক ইউনিয়নের মাদলা সীমান্তে ৫ মে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় সাকিব (১৭) নামে এক কিশোর। এ সময় সুজন বর্মণ (৩৫) নামে এক ভারতীয় নাগরিকও গুলিবিদ্ধ হন। এর আগে ৮ এপ্রিল বিজয়নগরের সেজামুড়া সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে মৃত্যু হয় মুরাদুর রহমান নামে এক কৃষকের। তার পরিবারের দাবি, সীমান্তে নিজ জমিতে কাজ করতে গেলে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করে বিএসএফ। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি কসবার পুটিয়া সীমান্তে গরু চরাতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে আল আমিন নামে কৃষক নিহত হন। ২৫ এপ্রিল আখাউড়ার ইটনা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে গুরুতর আহত হন আসাদুল ইসলাম নামে আরেক যুবক। ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল কসবার পুটিয়া সীমান্তে ঘোরাফেরার সময় বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে হাসান নামে এক যুবককে। একই বছরের ২৫ নভেম্বর কসবার বায়েক সীমান্তে ঘুরতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে আহত হন রুকন উদ্দিন ও জাকির হোসেন নামে আরও দুই যুবক।
জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার প্রায় ৭২ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। আর এসব সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোয় বাড়ছে আতঙ্ক। চোরাকারবারি ধরার অজুহাতে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশিদের হয়রানি করেন বিএসএফ সদস্যরা। ফাঁকা ফায়ারও করেন। মূলত সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে অনেক বাংলাদেশি নিজেদের জমি চাষ করেন, চরাতে যান গবাদি পশু। ফলে শূন্যরেখায় আনাগোনা থাকে স্থানীয়দের। এখন জমিতে ধান পাকলেও ভয়ে তা কাটার শ্রমিক মিলছে না।
বিএসএফের নির্যাতনে নিহত মুরাদের স্ত্রী বলেন, সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারীরা এখন তাদের জমিতে যেতেও ভয় পাচ্ছেন। মুরাদই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তাঁর মৃত্যুতে পুরো পরিবার দিশাহারা। সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা জানান, ‘আমাদের গবাদি পশু মাঝেমধ্যে সীমান্তের কাছাকাছি চলে যায়। তা নিয়ে আসতে গেলে বিএসএফ আমাদের ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায়, হত্যা করে। অথচ বিজিবির ভারতীয় কোনো নাগরিকের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা আজও আমরা লক্ষ করিনি।’
২৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ‘বিওপিগুলোতে প্রতিদিনই জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সভা করছি। জনসাধারণকে সর্বদা সতর্ক করি যেন ১৫০ গজের ভিতরে না যান। সীমান্তের অধিকাংশ বাসিন্দা কৃষিকাজে জড়িত। জমিতে অসাবধানতাবশত সীমান্তের ১৫০ গজের ভিতরে চলে গেলে বিএসএফ তাদের ধরে নিয়ে যায়। বাসিন্দাদের অসচেতনতা ও চোরাকারবারের কারণে সীমান্ত হত্যা ঘটছে। আমাদের পক্ষ থেকে এসব হত্যা বন্ধে বিএসএফকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘আমাদের কৃষক সীমান্ত এলাকায় কৃষিজমি দেখতে বা চাষ করতে গেলেও বিএসএফ গুলি চালায়। অন্য কোনো দেশে সীমান্তে গুলি করে হত্যার ঘটনা তেমন চোখে পড়ে না। ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যা বেশি ঘটছে। তা কতটুকু কমিয়ে আনতে পারি বিজিবি ও আমরা সে চেষ্টা করছি।’