২০০ বছরের ঐতিহ্য আদিবাসী মিলনমেলায় মুখরিত সব বয়সের আদিবাসী। এই মেলার মূল বিয়টিও মজার। পছন্দের জীবনসঙ্গী মেলে এই মেলায়।
গতকাল দুপুর গড়িয়ে বিকাল। কাচের চুড়ির টুংটাং শব্দ, ঢাক-ঢোলের বাজনা আর মাইক থেকে ভেসে আসা আদিবাসীদের গানের সুরের মূর্ছনায় মেতেছে পুরো এলাকা। এ দৃশ্য যেন ২০০ বছর ধরে আসা অনন্ত এক উৎসব, যা সবার কাছে ‘বাসিয়া হাটি’ নামে বেশ পরিচিত। প্রতি বছর দুর্গাপূজার বিজয়াদশমীর পরদিন এ মেলায় বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ ছুটে আসেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষের পদচারণে মুখরিত দিনাজপুরের বীরগঞ্জের গোলাপগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় মাঠ।
মেলায় সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে কনে সাজার মতো তরুণ-তরুণীদের সাজসজ্জা। রঙিন শাড়ি, মাথায় ফুল, হাতে কাচের চুড়ি, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক একেকজন যেন রঙের উৎসবে হারিয়ে যান তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির ভেলায়। এই মেলা শুধু কেনাকাটার আয়োজন নয়- এ যেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের এক সামাজিক উৎসব ও মিলন মেলা। দিনভর চলে নাচ-গান, বাজনার তালে দলগত পরিবেশনা আর তরুণ-তরুণীদের আড্ডা। শুধু সাঁওতাল নয়, হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষও মেতে ওঠেন এই উৎসবে। মিলনমেলার মাঠে দোকানের পসরা চোখে পড়ার মতো। কাচের চুড়ি, রঙিন ফিতা, ঝিনুক, মাটির পাত্র থেকে শুরু করে গৃহস্থালির দা-কুড়াল, হাঁড়ি-পাতিল সবই মেলে একসঙ্গে। প্রতি বছরের মতো গতকাল দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, বগুড়া, পঞ্চগড় ও নীলফামারী থেকে আসা সাঁওতাল সম্প্রদায়ের হাজারো নারী-পুরুষ ভিড় জমিয়েছেন গোলাপগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে। সঙ্গে এসেছেন অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও। শতবর্ষের ঐতিহ্য ধরে চলে আসা এই মেলা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আত্মীয়-স্বজনদের মিলনমেলায় পরিণত হলেও এর বিশেষ আকর্ষণ হলো যুবকদের পছন্দের জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার সুযোগ। এখানে যুবক ও তরুণীরা একে অন্যকে পছন্দ হলে পরিবারের মাধ্যমে আলোচনার পরে বিয়ে হয়- এমন প্রচলন আছে এই মেলাকে ঘিরে।
মেলায় আসা আদিবাসী তরুণী এঞ্জেলিনা মার্ডি জানান, একটা সময় এই মেলায় জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার প্রচলন ছিল বলে শুনেছি। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সব বদলে গেছে। এখন এই রীতিতে ভাটা পড়েছে। সময়ের সঙ্গে আদিবাসীদের জীবনযাত্রার মানে এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বেশির ভাগ আদিবাসী ছেলে-মেয়ে এখন স্কুলমুখী হয়েছে। কালের বিবর্তনে পুরোনো ঐতিহ্যগুলো অনেকটাই মুছে যেতে বসেছে।
এ ব্যাপারে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় কৃষক দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য মনজুরুল ইসলাম মনজু বলেন, এই মেলা আমাদের দীর্ঘদিনের সম্প্রীতির নিদর্শন। এই মেলায় সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ ছুটে আসে। এখানে আসা মানুষ খুঁজে পায় তাদের সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির বন্ধন।