এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন থেকে বাংলাদেশ মর্যাদা ছাড়া অর্থনৈতিক কোনো সুবিধা পাবে না। কিন্তু এ মর্যাদা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ যে বিলিয়ন ডলারের সুবিধা হারাবে, তা কীভাবে পূরণ করা হবে, সে বিষয়ে যথেষ্ট প্রস্তুতি ও বিকল্প বিষয়ে একটি সমন্বিত জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়নের আগে এ গ্র্যাজুয়েশন হবে আত্মঘাতী। এজন্য আমাদের পর্যাপ্ত সময় দরকার। সেজন্যই সরকারের প্রতি আহ্বান, এ এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়া আপাতত তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হোক।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে জনস্বার্থ : জনগণের সম্পৃক্ততা ও মতামত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কি!’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের যৌথ আয়োজন করে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন ওয়াচ-বিডি ও নাগরিক উদ্যোগ। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিপলস হেলথ মুভমেন্ট (পিএইচএম) বাংলাদেশের সমন্বয়কারী আমিনুর রসুল। নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন আইন বিশেষজ্ঞ তাসলিমা জাহান, সিরাক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস এম সৈকত, সাংবাদিক সালাউদ্দিন বাবলু, গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াছ।
তাসলিমা জাহান বলেন, বাংলাদেশ এলডিসিতে উত্তরণ করলে অসম প্রতিযোগিতার শিকার হব আমরা। স্থানীয় উৎপাদনের সঙ্গে বিদেশি বাজারে হঠাৎ করে চাহিদা এবং জোগানের অসামাঞ্জস্য আসতে পারে। এর দায়-দায়িত্ব কে নেবে? বাজার ভারসাম্য হারালে তার জন্য সরকার কী সুযোগসুবিধা এনেছে বা কী জবাবদিহিতা চাইব এর কোনো কিছুই এখনো নিশ্চিত হয়নি।
তিনি বলেন, উত্তরণের পর এসব সুবিধা ধীরে ধীরে সীমিত বা বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা সেই চাপ কতটুকু মোকাবিলা করতে পারব, সেটি বিবেচনায় রাখতে হবে।
এস এম সৈকত বলেন, বাংলাদেশ কোনো অর্থেই এই মুহূর্তে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের উপযুক্ত নয়। পরিসংখ্যান বা উন্নয়নের ক্রাইটেরিয়ার তথ্য যেটাই বলুক বাংলাদেশের বাস্তবতা বিবেচনায় সেসব তথ্য যথেষ্ট নয়। অপরিণত অবস্থায় এ গ্র্যাজুয়েশন হলে এখন পর্যন্ত আমাদের যা অর্জন সব বিফলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা স্থায়ী একটি বিপদের মধ্যে উপনীত হব, যা কাটিয়ে ওঠা অনেক কঠিন হবে।
সালাউদ্দিন বাবলু বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা সঠিকভাবে প্রতিফলিত না করে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন দেখানো উচিত নয়। জলবায়ু ঝুঁকি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সূচক, সব ডেটা সঠিকভাবে সংশোধন করতে হবে। মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে উন্নত বিশ্বের দায় এড়ানোর সুযোগ দেওয়া যাবে না। প্রথমে তথ্য যাচাই ও বাস্তব উন্নয়ন নিশ্চিত করেই উত্তরণ প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাওয়া উচিত।
মো. ইলিয়াছ বলেন, এলডিসি মর্যাদা পেলে আমাদের গার্মেন্টস শিল্প বড় সংকটে পড়বে। বৈদেশিক মুদ্রার ৮০-৮৫ শতাংশ আসে এ খাত থেকে। ৪০ লাখ শ্রমিক, যার অধিকাংশ নারী, এতে যুক্ত। ইতোমধ্যে অর্ডার সংকটে ছাঁটাই ও বকেয়া বেতনের সমস্যা বেড়েছে। শুল্ক সুবিধা বজায় না থাকলে অর্ডার অন্য দেশে চলে যাবে এবং অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে।