অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগে দেশে অর্থনৈতিক যে বিপর্যয় হয়েছিল সেটা অন্য কোনো দেশে ছিল না। এরকম একটি খাদের কিনারা থেকে দেশকে টেনে নিয়ে আসা সহজ ছিল না। রাজনীতি বা রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক বই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। অর্থনীতিবিদ ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমানের ‘অর্থনীতি, শাসন ও ক্ষমতা : যাপিত জীবনের আলেখ্য’ শীর্ষক বই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ুন কবির, সমাজতত্ত্ববিদ খন্দকার সাখাওয়াত আলী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ ও ভূঁইয়া আসাদুজ্জামান।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে পৃথিবীর কোনো দেশ বাংলাদেশের মতো অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়েনি। ব্যাংকের ৮০ শতাংশ টাকা নিয়ে চলে গেছে। ব্যাংকের আউটস্ট্যান্ডিং ২০ হাজার কোটি টাকা হলে ১৬ হাজার কোটি টাকা নেই। আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের পুনর্গঠনের জন্য ৩৫ বিলিয়ন ডলার লাগবে। যদিও আইএমএফ প্রাথমিক হিসেবে বলেছিল ১৮ বিলিয়ন ডলার লাগবে।’
আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে গণতন্ত্রকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি গত ১৫ বছরে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। গত ৫৪ বছর গণতন্ত্রকে সঠিকভাবে চলতে দেওয়া হয়নি।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে যাচ্ছে বলে মনে করেন বিএনপি নেতা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের বাণিজ্য শুল্ক বাংলাদেশকে বড় ধরনের বিপদে ফেলতে যাচ্ছে। যা উত্তরণে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশে যে বৈষম্য চলছে সেটা আগে ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের পর সেটা আরও তীব্রতর হচ্ছে। সেটা কমাতে কেউ কাজ করছে না। ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সব গ্রাম শহরে রূপ নেবে’। ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে জনগণের থাকার কথা ছিল। কিন্তু সবসময় সেটা উপেক্ষা করা হয়েছে। সব সরকার তাদের প্রকল্পগুলোতে সবসময় ভৌত অবকাঠামোকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। সামাজিক অবকাঠামোতে বরাদ্দ কম দেওয়া হয়েছে। বৈষম্যমূলক নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে।’ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘২০১৩ থেকে ২০২৫ সাল গুরুত্বপূর্ণ তিনটি অধ্যায়। কর্তৃত্ববাদী শাসন কীভাবে স্বৈরতন্ত্রে উপনিত হলো এবং নিজেকে কীভাবে মানুষের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে দাঁড় করাল- এরপর তরুণদের অভিভূত সাহসের সূত্র ধরে পুরো জাতি জেগে উঠে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাল। অর্থনৈতিক শাসন ক্ষমতার যে বলয় এবং তার যে মিথষ্ক্রিয়া সেগুলো বোঝা আমাদের জন্য বেশ গুরত্বপূর্ণ।