ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, যারা কর দেয় তারাই বেশি হয়রানির শিকার হয়। এই হয়রানি বন্ধ করতে হবে। রাজস্ব ও মুদ্রানীতিতে সামঞ্জস্য আনতে হবে। ব্যবসায়ীরা এমন রাজস্ব ও মুদ্রানীতি চান, যা সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের জন্য প্রযোজ্য। এ ছাড়া আমরা এমন একটা বাজেট চাই, যা ব্যবসাবান্ধব।
গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘প্রাক বাজেট আলোচনা ২০২৫-২৬ বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল ও চ্যানেল ২৪ যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
ডিসিসিআইয়ের সভাপতি তাসকীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, দৈনিক সমকাল সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী প্রমুখ।
সভায় আবদুল আউয়াল মিন্টু আরও বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি বেসরকারি খাত, আমরা এমন নীতি চাই যেখানে আমাদের প্রত্যাশার কিছুটা হলেও যেন প্রতিফলিত হয়। কিন্তু বাজেটে বেসরকারি খাত বৈষম্যের শিকার। আমরা চাই এমন একটি মুদ্রানীতি ও এমন একটি রাজস্বনীতি যেটি সরকারের জন্য যেভাবে প্রযোজ্য, বেসরকারি খাতের জন্যও সেভাবে প্রযোজ্য হওয়ার কথা থাকলেও তা বস্তাবে দেখা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি কখনোই কমবে না। সংকোচিত মুদ্রানীতিই মূল্যস্ফীতি কমানোর একমাত্র উপায় না।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ইতোপূর্বে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু কার্যক্রম দেখেছি। টাকা ছাপিয়ে অর্থনীতির সংকট কাটানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা দেখেছি। এ ধরনের পদক্ষেপ রাষ্ট্রের সংকট নিরসনের পরিবর্তে রাষ্ট্রের সমস্যা আরও বৃদ্ধি করে। বরং আমাদের যেতে হবে বিনিয়োগের দিকে। একটা রাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি বিনিয়োগ ভালো না হয় ট্যাক্স ও জিডিপির কথা বলে লাভ হবে না, এজন্য দেশে বিদেশি বিনিয়োগ ও স্থানীয় বিনিয়োগের দিকে আলাদা গুরুত্ব দিতে হবে।’
এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা সব ক্ষেত্রেই করহার সমান করার লক্ষ্যে কাজ করছি। আগামীতে এটা আমরা করব। ভবিষ্যতে করহারে বৈষম্য থাকবে না, বৈষম্যহীন এক করব্যবস্থার দিকেই আমরা এগোচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘শিল্প খাতের উন্নয়নে অনেকেই কর অবকাশ চান। কিন্তু কাক্সিক্ষত রাজস্বের লক্ষ্যে এটা বন্ধ করতে হবে। অনেকেই বলছে, কর অবকাশ দিলে শিল্পের উন্নয়ন হবে, তাদের এসব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ধীরে ধীরে এ থেকে বেরিয়ে আসব।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমাদের মূল রাজস্ব আয়কর ও ভ্যাট থেকে আসবে। তাই শিগগিরই অটোমেশনে দিকে যাচ্ছে এনবিআর।’
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক বেশি অপ্রয়োজনীয় কর রয়েছে। যা শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনা জরুরি। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির বিষয় অন্তর্বর্তী সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা অত্যান্ত প্রশংসনীয়। তবে দেশটির সঙ্গে আমাদের যে বাণিজ্য ঘটিতি রয়েছে, তা দ্রুত কমিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করি।’
ডিএসসিসির সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘বর্তমানে দেশে যেমন নির্বাচনের দরকার রয়েছে। তেমনি প্রতি ধাপে সংস্কারেরও প্রয়োজন আছে। কিন্তু এর আগে টাস্ক রিফর্মেশন সম্পূর্ণ অটোমেশনের আওতায় আনা বলে জরুরি মনে করছি।’