ঈদে জনগণের নিরাপত্তায় দেশব্যাপী নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা। এজন্য সশস্ত্র বাহিনীসহ পোশাকে ও সাদা পোশাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। ঈদপূর্ব এবং পরবর্তী অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নেওয়া সমন্বিত ব্যবস্থায় একযোগে কাজ করছেন পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। ঈদের সময় বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে কূটনৈতিক পাড়া, ব্যাংক এলাকা, রেলস্টেশন এবং বাস টার্মিনালগুলো। নিরাপত্তার আওতায় রাখা হচ্ছে সাইবার জগৎকেও। এক কথায় ঈদে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ে এখন সারা দেশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতিটি বাহিনীর সদর দপ্তর, বিভাগ এবং জেলা থেকে সার্বক্ষণিকভাবে ইউনিটগুলোর কর্মকা মনিটরিং করা হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কন্ট্রোল রুম, থানা কিংবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর সহযোগিতা নিতেও জনসাধরণকে অনুরোধ করা হয়েছে। খবর পেলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ। জান গেছে, প্রতি বছরই ঈদের আগে তুলনামূলক অপরাধ বেড়ে যায়। ঈদের ছুটিতে সবাই গ্রামে চলে গেলে ফাঁকা ঢাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। পাশাপাশি ঈদুল আজহার সময় চামড়াসন্ত্রাস ও পশুর হাটে চাঁদাবাজিসহ বেশ কিছু অপরাধী চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই এবারের ঈদে টানা ১০ দিনের ছুটিতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সশস্ত্র বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঈদের ছুটিতে থাকবে বিশেষ টহল ও চেকপোস্ট। সন্দেহভাজন ব্যক্তি, গাড়ি, ব্যাগ মেটাল ডিটেকটর, ভেহিক্যাল স্ক্যানার ও ম্যানুয়াল চেকিংয়ের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিতের স্বার্থে অনেক পদক্ষেপই নিয়েছে র্যাব। সম্ভাব্য সবকিছু মাথায় রেখেই নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা হয়েছে। র্যাবের প্রতিটি সদস্য তাদের সর্বোচ্চটা দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর আশপাশে স্থাপিত সিসি ক্যামেরাগুলো সক্রিয় আছে কি না তা দফায় দফায় পরখ করে দেখা হচ্ছে। না থাকলে সেগুলো সক্রিয় করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিনোদন কেন্দ্র, বিভিন্ন মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার, আড়তের নিরাপত্তা জোরদারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে স্পর্শকাতর স্থান, সড়ক, স্থাপনা, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনালে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। ডাকাত, ছিনতাইকারী ও অজ্ঞান পার্টি ধরতে পুলিশ ও র্যাবের বিশেষ টিম মাঠে সক্রিয় রয়েছে। প্রতিটি হাটে পোশাকে ও সাদা পোশাকে নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াও থাকছে ওয়াচ টাওয়ার ও পুলিশের কন্ট্রোল রুম। চামড়া কেনাবেচার ক্ষেত্রে কেউ যাতে সিন্ডিকেট তৈরি করে জোর জবরদস্তি করতে না পারে সেজন্য কঠোর অবস্থানে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সদর দপ্তর, ডিএমপি ও র্যাবপ্রধানের বিশেষ নির্দেশনা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছানো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক ও নৌপথে আকস্মিক দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিম, রেসকিউ বোট, ডুবুরি, অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামসহ অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর জানান, ঈদ-পূর্ববর্তী, ঈদের সময় এবং ঈদ-পরবর্তী মূলত তিনটি পর্যায়ে নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ সমন্বিতভাবে কাজ করছে। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে চেকপোস্টের সংখ্যা এবং রাত্রিকালীন টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। গুজব প্রতিরোধে আমাদের সাইবার পেট্রোলিং বাড়ানো হয়েছে। মহাসড়কগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঈদের জামাতের নিরাপত্তায় আমাদের বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে।
ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে বাস, রেল ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে বিশেষ ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। টিকিট কালোবাজারি থেকে শুরু করে অজ্ঞান, মলম পার্টি ও ছিনতাই প্রতিরোধে আমরা সতর্ক রয়েছি। চেক পোস্ট ও প্যাট্রল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এর বাইরে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ফাঁকা রাজধানীতে যাতে কোনো অপরাধ না ঘটে সেজন্য পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিপণিবিতান এবং বাণিজ্যিক এলাকায় আমাদের বিশেষ নজরদারি থাকবে। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ জানান, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে উপকূল এবং নদী তীরবর্তী অঞ্চলের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছে কোস্ট গার্ড। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে লঞ্চ, খেয়া, ফেরিঘাটের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ টহল, জনসচেতনতামূলক মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, সন্দেহজনক ব্যক্তি ও বোট বা নৌযানে তল্লাশি এবং যাত্রীদের ব্যাগ স্ক্যানসহ অন্যান্য নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। দুষ্কৃতকারীরা যেন কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করতে না পারে তার জন্য সদা তৎপর রয়েছেন কোস্ট গার্ডের প্রতিটি সদস্য।