আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। আবার কেউ কেউ আছেন ইংরেজি ভাষা আয়ত্ত করার মোহ নিয়ে ছোটাছুটি করেন। তাদের কাছে এটা একটা ফ্যাশনের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আগে বুঝতে হবে বাস্তবতা ও নিজের অবস্থান। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তখনই ধরা দিবে সাফল্য। ভাবাভাবির এসব খুঁটিনাটি নিয়ে লিখেছেন- শামছুল হক রাসেল
এক সহকর্মী একদিন জিজ্ঞাসা করলেন, ইংরেজিটা কীভাবে আরও ভালো করে শেখা যায় বলুন তো? উত্তর দিলাম, ও রকম কোনো চটজলদি সহজ পদ্ধতি নেই, শর্টকাট নেই। শুনে তিনি আবার জানতে চাইলেন, আপনার কি মনে হয় চেষ্টা করে লাভ হতে পারে? মানে, ইংরেজি শেখার জন্য যা যা দরকার সবটাই যদি করি, তাতে কি কাজ হবে? বললাম, সেটা নির্ভর করছে কয়েকটা বিষয়ের উপর। প্রথমেই ভাবা দরকার, ইংরেজি ভাষাটা আপনার ঠিক কোন কাজে লাগবে? আপনি কি অস্ট্রেলিয়ায় 'রোড ট্রিপ' করতে চান বলে ইংরেজিটা ঝালিয়ে নিতে চাইছেন, না কি উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংরেজি শিখতে চাইছেন, না কি কল সেন্টারে কাজ করে চটপট খানিক রোজগার বাড়ানোর ধান্ধা করছেন? অর্থাৎ ইংরেজি শেখার লক্ষ্য কিংবা উপলক্ষটা আসলে কি?
এগুলোর কোনোটাই অবশ্য তিনি করতে চান না। ঘটনা হলো, তিনি জানেনই না ঠিক কী করতে চান, কেনই বা ইংরেজিটা ভালো করে শিখতে চান। অনেকের ক্ষেত্রেই এমন দেখা যায়। অথচ ভাবনাটা কিন্তু সব সময়ই শুরু করা উচিত একেবারে গোড়ার প্রশ্ন দিয়ে। আপনার জীবনে ইংরেজির প্রয়োজন বা ভূমিকাটা ঠিক কী? সব ক্ষেত্রেই হয়তো আগে থেকে জানা সম্ভব হয় না কোন মুহূর্তে ইংরেজি ভাষা দরকার হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটা ধারণা থাকে। সেই ধারণার ওপর ভিত্তি করেই নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হয়, হঠাৎ যাতে অপ্রস্তুতে না পড়তে হয় তার জন্য। আমার দুই বন্ধু সেটা করেনি। সুতরাং যথেষ্ট নাকাল হতে হয়েছিল তাদের।
শফিক বেশ দক্ষ 'শেফ', ঢাকাতেই তার কাজকর্ম। হঠাৎ করেই সিডনির এক হোটেলে উঁচু পদে লোভনীয় অফার পেল। স্বভাবতই অফারটা পেয়ে শফিক খুবই খুশি। কিন্তু তারপরই সে জানতে পারল, অস্ট্রেলিয়ার ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট পেতে হলে তাকে একটা ইংরেজির পরীক্ষা দিতে হবে, যার নাম আই-ই-এল-টি-এস। শোনামাত্রই আশঙ্কিত হয়ে পড়ল সে। ইংরেজির দৌড় যে তার অত্যন্ত সীমিত, সেটুকুও খুব একটা দরকার হয় না। ঢাকাই চিকেন বিরিয়ানি সে এক্ষুনি বানিয়ে দিতে পারে কিন্তু ইংরেজি! এই পরীক্ষায় পাস করা তো তার পক্ষে অসম্ভব! পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় যোগ্যতামানে পৌঁছানোর জন্য ঘষামাজা করতে হবে নিজেকে, সময়ও হাতে কম- নাঃ, শেষ পর্যন্ত শফিককে ছেড়েই দিতে হলো অত ভালো চাকরির অফারটা।
আর এক বন্ধু শুভ ইতিমধ্যে লন্ডনের একটি ইউনিভার্সিটিতে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে যাওয়ার সুযোগ পেল। কিন্তু শর্ত, আই-ই-এল-টি-এস পরীক্ষায় তাকে ৭ ব্যান্ড স্কোর রাখতেই হবে। ভাষাটা সে যথেষ্টই জানে, সমস্যা হওয়ার কথা নয় কিন্তু ঠিকঠাক পরিকল্পনা মাফিক না এগোনোর ফলে শেষ পর্যন্ত গোলমাল বাধল। প্রথম কয়েকটা চান্সে শুভ পরীক্ষাটা দিল না নেহাত ছোটখাটো সব কারণে। তারপর একদিন আতঙ্কিত হয়ে আবিষ্কার করল, এমন সমস্যায় সে পড়তে চলেছে যেটা এতদিন ভেবেই দেখেনি। পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করাতে, পরীক্ষার তারিখ পেতে, পরীক্ষায় বসতে, কয়েক সপ্তাহ তো লাগবেই এবং তারপর স্কোরের জন্য অপেক্ষা, ইউনিভার্সিটিতে স্কোর পাঠাতে এবং ইউনিভার্সিটি স্কোর অ্যাপ্রুভ করতে আরও কয়েক সপ্তাহ। অত সময় তো তার হাতে নেই। শেষ পর্যন্ত শফিকের মতো শুভকেও সুযোগটা ছেড়ে দিতে হলো! নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে আবার নতুন করে ভাবতে বসতে হলো তাকে। সেই সহকর্মীর প্রশ্নে ফিরি। 'চেষ্টা করে কোনো লাভ আছে?' এ প্রশ্নের উত্তর তো কেবল তার নিজের পক্ষেই দেওয়া সম্ভব। পরামর্শ চাইলেন বলে আমিও কিছুটা ভরসা দিলাম। বললাম, ক্লাসরুম স্টাডিও করুন প্রথমে, এমন একটা কোর্স নিন যাতে ভাষাটার সব দিকই পড়ানো হয়। ক্লাস করতে করতে বুঝে নিন, কোন দিকটা আপনার জোর দিয়ে শেখা দরকার। আর একান্তই ক্লাস করতে না চাইলে সেলফ স্টাডিও করা যেতে পারে, তার মজাই আলাদা। আমাদের চারপাশে তো সারাক্ষণই কতভাবে ইংরেজি ঘিরে থাকে। এই যেমন, সাব-টাইটেলসহ ইংরেজি ফিল্ম দেখা যায়। টেলিভিশন, গান, বই এবং সর্বোপরি ইন্টারনেট তো আছেই। সবচেয়ে বড় কথা, জানার আগ্রহ থাকতে হবে। তবে আগে ভাবুন কোনটা শিখতে চান। কারণ উদ্দেশ্যবিহীন দৌঁড়াদৌড়ি করে লাভ নেই। আগে লক্ষ্য পরে সিদ্ধান্ত।
বিডি প্রতিদিন/আশিক