দেশের নামকরা একটি করপোরেট হাউসে একসঙ্গে কাজ করত সাইদ এবং কাশফা। কাজ করতে করতেই একে অপরকে পছন্দ করে বিয়ে করে দুজন। বিয়ের পর কাশফা চাকরি পরিবর্তনের কথা ভেবেছিল। কিন্তু সাইদের কথায় চাকরি পাল্টানোর চিন্তাকে খুব একটা আমলে নেয়নি।
আসলে বিয়ের পরও একই অফিসে একই সঙ্গে থাকার আইডিয়াটা বেশ ভালোই লেগেছিল সাইদ ও কাশফার। প্রথম দিকে বেশ মজাই লাগত ওদের। একসঙ্গে অফিসে যাওয়া-আসা, লাঞ্চ ব্রেকে একসঙ্গে ক্যাফেটেরিয়ায় বা কোনো কোনো দিন কাছের কোনো রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাওয়া, কাজের মাঝে মাঝে ফোনে, এসএমএসে অথবা করিডরে ছোটখাটো আড্ডা। দিনে দিনে অফিসের কারণেই দুজনে যেন আরও কাছাকাছি চলে এসেছিল। কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই কাশফা লক্ষ্য করছিল, তার প্রতি সহকর্মীদের ব্যবহারে কেমন যেন পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে বিয়ের পরপরই তার একটা প্রমোশন হওয়ার পর থেকেই।
অফিসে যেহেতু সাইদ বস। তাই কাশফা কানাঘুষা শুনতে পাচ্ছিল- সহকর্মীরা ভাবছিল বসকে বিয়ে করার জন্যই কাশফার এত তাড়াতাড়ি উন্নতি। অফিসে অকারণে এই গসিপের জন্য সাইদও যেন কিছুটা বিব্রত ও বিরক্ত। এর ফলে অফিসে এখন সামান্য কথা বলতেও দুজনে যেন আর স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। কেমন যেন একটা অস্বস্তিতে ভোগে দুজনই। অফিসে তৈরি হওয়া এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতির জন্য কাশফার প্রতি মুহূর্তে মনে হয়, এবার সে চাকরিটা ছেড়ে দেবে। কিন্তু চাকরি ছেড়ে দেওয়াটা কখনো সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। যেসব স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে চাকরি করেন, তাদের জন্য রইল কিছু পরামর্শ।
কি করবেন : পার্সোনাল আর প্রফেশনাল লাইফ সম্পূর্ণ আলাদা রাখুন। বাড়িতে আপনারা স্বামী-স্ত্রী কিন্তু অফিসে আপনারা সহকর্মী ছাড়া আর কিছু নন- এ কথাটা সব সময় মাথায় রাখার চেষ্টা করুন। যতটা সম্ভব অফিসে নিজেদের মধ্যে একটা ফর্মাল রিলেশনশিপ বজায় রাখাই শ্রেয়। প্রয়োজনে নিশ্চয়ই কথা বলবেন। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে একে-অপরের সঙ্গে সময় না কাটানোই ভালো।
আপনার অন্য সহকর্মীর সঙ্গে যেমন ব্যবহার করেন, অফিসে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও ঠিক তেমনই সম্পর্ক থাকা উচিত। অফিসে সবারই কিছু একান্ত সহকর্মী বা ভালো বন্ধু থাকে। বিয়ের আগে যেমন লাঞ্চ করতে যেতেন ঠিক তেমনই বিয়ের পরও সহকর্মীদের সঙ্গে লাঞ্চে যান। বিয়ে হয়েছে তার মানে এই নয়, নিজেদের আলাদা কোনো ফ্রেন্ড সার্কেল থাকতে পারে না- এমনটা কিন্তু একেবারেই নয়।
প্রতিদিন একসঙ্গে অফিসে আসা-যাওয়া না করে মাঝে মাঝে আলাদা আলাদা যাওয়া-আসা করুন। এতে একঘেঁয়েমি আসবে না। অফিসের কাজে যাতে কোনোমতেই ব্যক্তিগত সম্পর্কের ছায়া না পড়ে, সেদিকে সবসময় বিশেষ খেয়াল রাখবেন। সারাক্ষণ ফোনে গল্প করা, একসঙ্গে আড্ডা দেওয়া অথবা কাজের মাঝে একে-অপরকে ঘন ঘন এসএমএস না পাঠানোই ভালো। সহকর্মীরাও আর কিছু বলার সুযোগ পাবেন না।
স্বামী-স্ত্রী অফিসে একসঙ্গে কাজ করলে সহকর্মীদের মধ্যে একটু গসিপ হতেই পারে। সব কথায় কান দেবেন না। খেয়াল রাখবেন, এই গসিপের কালো ছায়া যেন দাম্পত্যে কোনো প্রভাব না পড়ে। অফিসের কোনো কথা কখনো বাড়ি পর্যন্ত টেনে নেবেন না। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়া যদি ভালো থাকে এবং একে-অপরের বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন তাহলে এসব ছোটখাটো সমস্যা কখনো আপনাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করতে পারবে না।
বিডি প্রতিদিন/আশিক