দ্বীপজেলা ভোলার সদর উপজেলায় বসুন্ধরা শুভসংঘের আয়োজনে শব্দদূষণ রোধে করনীয় শীর্ষক আলোচনা সভা ও সচেতনতামূলক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রখ্যাত ছড়াকার সুকুমার বড়ুয়া শব্দদূষণ নিয়ে লিখেছিলেন, ‘শহরের পাতি কাক ডাকে ঝাঁকে ঝাঁকে/ঘুম দেয়া মুশকিল হর্নের হাঁকে।’ কবিতাটিতে কবির প্রথম দিকের বর্ণনায় দেখা যায়, গ্রামীণ পরিবেশে বিভিন্ন প্রাণী, যেমন-গরু, হাঁস, কবুতর, দোয়েল, চড়ুই, ঘুঘু, টুনটুনি প্রাকৃতিকভাবে ডেকে যায়। এটি প্রকৃতির এক সুমধুর সংগীতের ন্যায় মনে হয়, যা মানুষের মনকে প্রশান্ত করে। কিন্তু শহুরে জীবনে সেই সুমধুর সুরের পরিবর্তে যানবাহনের হর্ন হইতে শুরু করিয়া বিভিন্ন যান্ত্রিক শব্দ আর নাগরিক কোলাহল নিবিষ্ট চিত্তের মানুষকে অতিষ্ঠ করে তোলে।
শব্দদূষণ রোধে জনসচেতনতা বাড়াতে বুধবার সকালে ভোলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শব্দদূষণ রোধে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করে বসুন্ধরা শুভসংঘ ভোলা সদর উপজেলা শাখা।
বসুন্ধরা শুভসংঘ আয়োজিত শব্দদূষণ রোধে করনীয় শীর্ষক আলোচনা সভা ও সচেতনতামূলক মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ভোলা জেলা শাখার সহকারী পরিচালক তোতা মিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ভোলা সদর শাখার সহ-সভাপতি মো. শরাফত হোসেন, বসুন্ধরা শুভসংঘ ভোলা সদর উপজেলা শাখার উপদেষ্টা মহিউদ্দিন মাসুদ, সিনিয়র শিক্ষক মো. শরীফ আল মামুন, মো. আব্দুর রহমান, ফারহানা রশিদ, বাদল চন্দ্র দে, জুমা কুন্ডু, লোকেশ রঞ্জনা, পরিবেশ অধিদপ্তর ভোলা জেলা শাখার হিসাবরক্ষক মতিউর রহমান মুন্না, বসুন্ধরা শুভসংঘ ভোলা জেলা শাখার সভাপতি মোঃ শাফায়াত হোসেন (সিয়াম), সহ-সভাপতি মীর আবিদ হোসেন।
বসুন্ধরা শুভসংঘ ভোলা সদর উপজেলা শাখার সভাপতি মো. জিহাদের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘ ভোলা শাখার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলে রাব্বি রিমন, দপ্তর সম্পাদক সুমাইয়া আক্তার, ইভেন্ট সম্পাদক মো. সাইদুর রহমান, কর্ম ও পরিকল্পনা সম্পাদক ইসরাত জাহান নুহা, বসুন্ধরা শুভসংঘ ভোলা সদর উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি তাযকিয়া ইনসান, সাধারণ সম্পাদক নুর ফাতেমা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমান, অর্থ সম্পাদক রাফিয়া আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক মো. নাইমুর রহমান, নারী বিষয়ক সম্পাদক বিবি ফাতেমা, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক সুমাইয়া ইসলাম জেবা, কার্যকরী সদস্য মো. সাব্বির, ইসরাফিল হাসান উজ্জ্বল, মো. আবদুর রহমান জামি, নুসরাত জাহান, মারিয়া আক্তার মোহনা সহ বসুন্ধরা শুভসংঘের সদস্যরা।
এ সময় বক্তারা বলেন, ‘সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি শব্দদূষণের ফলে আমাদের দেশের বিভিন্ন এলাকা এখন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ দূষণের প্রধান উৎস বিভিন্ন যানবাহনের শব্দ ও হাইড্রলিক হর্ন। যা শিশু, বয়স্ক, অসুস্থ ব্যক্তিসহ বসবাসযোগ্য নগরী ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। অতিসত্বর এসব যানবাহনের শব্দদূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং শব্দদূষণ সৃষ্টিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
পরিবেশ অধিদপ্তর ভোলা জেলা শাখার সহকারী পরিচালক তোতা মিয়া বলেন, ‘শব্দদূষণ একটি মারাত্মক দূষণ। শব্দদূষণ রোধে সচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজন করায় বসুন্ধরা শুভসংঘকে পরিবেশ অধিদপ্তর, ভোলা জেলা শাখার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬-এর শতভাগ বাস্তবায়ন, যানবাহনে ব্যবহৃত হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি বন্ধ করা, হর্ন বাজানোর শাস্তি বৃদ্ধি ও চালকদের শব্দসচেতনতা যাচাই করে লাইসেন্স প্রদান করা শব্দদূষণ কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৃক্ষ অনেকটা শব্দ প্রতিরোধ করে এর তীব্রতা কমিয়ে দেয়। তাই শহরাঞ্চলে ও গ্রামে রাস্তায় দুই পাশে বেশি বেশি বৃক্ষ লাগিয়ে শব্দের তীব্রতা কমানো যেতে পারে। আর সবচেয়ে বেশি দরকার জনসচেতনতা। মানুষকে বুঝতে হবে, জানতে হবে কোনটা খারাপ আর কোনটা ভালো।’
বসুন্ধরা শুভসংঘ ভোলা জেলা শাখার সভাপতি মো. শাফায়াত হোসেন (সিয়াম) বলেন, ‘আমেরিকান স্পিস অ্যান্ড হিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন (আশা) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ৭১ থেকে ৯০ ডিবি মাত্রার শব্দ তীব্রতর শব্দদূষণ হিসেবে পরিগণিত হয়। আমরা যারা শব্দদূষণ সৃষ্টি করছি তারাও এর ক্ষতির শিকার হই। কাজেই সরকার গৃহীত কর্মসূচির পাশাপাশি শব্দদূষণের উৎসগুলো বন্ধ করার জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। সরকার বা কোনো একটি সংস্থার পক্ষে এককভাবে এ সমস্যার সমাধান কঠিন। তাই সবাই মিলে শব্দদূষণ প্রতিরোধে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।’
বসুন্ধরা শুভসংঘ ভোলা সদর উপজেলা শাখার সভাপতি মো. জিহাদ বলেন, ‘শব্দদূষণ মানুষের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। শব্দদূষণের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকার সকল বয়সের মানুষ আজ দিশেহারা। কোনভাবে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তাই শব্দদূষণ রোধে এবং জনসাধারণকে সচেতন করতে বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে ভোলা সদর উপজেলায় বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে।’
এসময় বসুন্ধরা শুভসংঘ ভোলা সদর উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে শব্দ দূষণ রোধে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণও করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/আশফাক