ফুটবল ঘিরে ক্রীড়াঙ্গনে এখন উৎসবের আমেজ। ১০ জুন ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর এশিয়া কাপ বাছাই পর্বে লড়বে। ১৯৭৩ সাল থেকেই জাতীয় দল আন্তর্জাতিক আসরে খেলছে। কিন্তু ১০ জুনের ম্যাচ ঘিরে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে তা অতীতে দেখা যায়নি। ইংলিশ লিগে খেলা হামজা দেওয়ান চৌধুরীই মূল আকর্ষণ। ২৫ মার্চ শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জার্সিতে তাঁর অভিষেক হয়েছে। এক ম্যাচ খেলেই দেশের ক্রীড়ামোদীদের মন জয় করেছেন। এত বড় মাপের খেলোয়াড় জাতীয় দলে খেলবেন তা ছিল স্বপ্ন। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এ খেলোয়াড়ের অভিষেক হয়েছে। এবার প্রথমবার দেশের মাটিতে খেলবেন।
হামজা একা নন, ১০ জুন আরও দুই প্রবাসী ফুটবলার বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন। একজন কানাডা জাতীয় দলে খেলা সামিত সোম। আরেকজন ইতালিতে খেলা ফাহামিদুল ইসলাম। তাঁদের অন্তর্ভুক্তিতে বাংলাদেশ স্বপ্নের দলে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে ম্যাচের গুরুত্ব ও আকর্ষণ অনেক বেড়ে গেছে। ঢাকা শহর তো বটেই, ম্যাচ ঘিরে সারা দেশ উৎসবে ভাসছে। ফুটবলারদের কাছে এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে। মান নিচে নেমে যাওয়ায় বাংলাদেশের ফুটবল ঘিরে আগ্রহ একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছিল। সেই ফুটবলে কি না নতুন প্রাণ এসেছে। ক্রিকেট আড়ালে ঠেলে আলোচনায় এখন শুধু ফুটবল আর ফুটবল।
এমন উৎসবের মাঝেও স্বয়ং ফুটবলাররা হতাশায় দিশাহারা। এতটা সংকটাপন্ন অবস্থা যে তাঁরা কোরবানির ঈদ কীভাবে উদ্যাপন করবেন তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন। কারণ ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত তাঁরা। পেশাদার লিগ দিয়ে ফুটবল মৌসুমের পর্দা নেমেছে। নতুন মৌসুমের দলবদলের কার্যক্রমও শুরু হয়ে গেছে। অথচ শেষ হওয়া মৌসুমের পারিশ্রমিকই বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। ১০ ক্লাবের অধিকাংশ পেমেন্ট বাকি রেখেছে। জানা গেছে, মৌসুম শেষের পর খেলোয়াড়দের ৭০ ভাগ পেমেন্টই বাকি। এ ক্ষেত্রে ফিফার ভয়ে বিদেশিদের অর্ধেকের বেশি বকেয়া শোধ করলেও স্থানীয় ফুটবলারদের করুণ হাল। আদৌ তাঁরা বকেয়া অর্থ পাবেন কি না তা নিয়ে চিন্তিত।
বকেয়া তালিকায় লিগ চ্যাম্পিয়ন ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডানের নাম রয়েছে। অবশ্য ক্লাবটির বর্ষীয়ান কর্মকর্তা ফজলুর রহমান বাবুল বলেন, ‘আমরা লিগ শেষের পরই বিদেশিদের ফুল ও স্থানীয়দের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ পেমেন্ট করেছি। বাকি টাকাও ঈদের আগে দেওয়া হবে।’ এ বিষয়ে দলের এক ফুটবলারের সঙ্গে আলাপ করলে কষ্টের হাসি দিয়ে বলেন, ‘আমার কিছু বলার নেই।’ মোহামেডানের যখন এ অবস্থা তখন অন্যদের কী হবে? প্রায় ২০০ ফুটবলার এখনো পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত। অভিজাত এলাকার ক্লাবে খেলা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফুটবলার বলেন, ‘আমরা জানি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা। কিন্তু আমরা শূন্য অবস্থায় থাকব তা ভাবতেই পারিনি। ভেবেছিলাম বকেয়া অর্থ পেলে কোরবানির গরু কিনব। এখন তো চোখে শর্ষে ফুল দেখছি।’ ২০০ ফুটবলারের যদি পেমেন্ট বাকি থাকে তাহলে তাঁদের ঈদই মাটি।