বাংলাদেশ জাতীয় দলে অভিষেক হওয়ার পর ফুটবল এখন হামজাময়। তার দেখাদেখি বাংলাদেশি বংশো™ভূত বেশ কজন ফুটবলার জাতীয় দলে খেলার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে নতুন কোনো প্রবাসী ফুটবলার হামজা দেওয়ান চৌধুরীর সঙ্গী হতে পারবেন কি না তা নিয়েই আলোচনা চলছে। ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচ। ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামেই ম্যাচটি আয়োজনের সম্ভাবনা রয়েছে। এনিয়েও বাড়তি উন্মাদনা কাজ করছে। ঢাকার দর্শকরা গ্যালারিতে বসে সরাসরি হামজার খেলা দেখবেন, এটাও তো বড় পাওয়া। যাক, এ উন্মাদনায় আরও এক উত্তাপ ফুটবলপ্রেমীদের নাড়া দিচ্ছে। আর তা পেশাদার লিগের শিরোপা।
৪৮ দিন পর দেশের ফুটবলে সবচেয়ে মর্যাদাকর এই আসরে ১১তম (দ্বিতীয় লেগ) রাউন্ড শুরু হয়েছে। তবে আসল উত্তেজনা আজ থেকেই। যে তিনটি ক্লাবের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে সেই ঢাকা মোহামেডান, ঢাকা আবাহনী ও বসুন্ধরা কিংস ১১তম রাউন্ডে খেলতে নামছে আজ। গাজীপুরে আবাহনী লড়বে ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের বিপক্ষে। এ ম্যাচ ঘিরে ততটা উত্তেজনা নেই। কেননা দুর্বল প্রতিপক্ষ বলে শুধু জয় নয়, আবাহনী গোল উৎসবে মেতে থাকলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। যত উত্তেজনা বিকাল সাড়ে ৫টায় বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনার ম্যাচ ঘিরে। এখানেই মোহামেডান অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলবে বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে। ১০ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে মোহামেডান। আবাহনী ২৩ নিয়ে ২-এ। অন্যদিকে কিংস ২০ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে।
মোহামেডানের চেয়ে সাত ও আবাহনীর চেয়ে তিন পয়েন্টে পিছিয়ে রয়েছে বসুন্ধরা কিংস। শিরোপা রেসে টিকে থাকলেও তা আরও মজবুত করতে হবে তপু বর্মণদের। মোহামেডান জিতে গেলে বসুন্ধরা কিংস আরও পিছিয়ে পড়বে। জিতে গেলেও মোহামেডানের চেয়ে চার পয়েন্টের পেছনেই থাকবে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, মোহামেডান ও আবাহনীকে টপকে শিরোপা জিততে অন্য দলের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে। যদি মোহামেডান ও আবাহনী অন্যদের কাছে পয়েন্ট হারায়। সেই অবস্থান তৈরি করতে আগে আজ জয়টা খুবই জরুরি। এতে উজ্জীবিত হয়ে পরবর্তী ম্যাচগুলো খেলতে পারবে।
শক্তির কথা বললে আজ ঘরের মাঠে কিংসই ফেবারিট। তবে বড় ম্যাচে ফেবারিটের তকমা মানায় না। যারা সেরাটা দিতে পারবে তারাই জিতবে। রবসনের অনুপস্থিতি শুরু থেকে টের পাচ্ছে কিংস। আজ আবার আরেক ব্রাজিলিয়ান মিগেল ফিগেইরাও থাকছেন না। দেশে ফিরে যাওয়ার পর তিনি এখনো ফেরেননি। দুজনায় প্রথম লেগে থাকা অবস্থায় তারা কুমিল্লায় মোহামেডানের কাছে হেরে যায়। দুই সফল জুটি না থাকাটা কি বিপদ ডেকে আনবে? দুজনায় না থাকার পরও মোহামেডানের চেয়ে কিংস শক্তিশালী। আজই অভিষেক হবে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড হুয়ান লেসকানোর। তার বায়োডাটা বলে দেয় তিনি কতটা উঁচুমানের খেলোয়াড়। শুরুতে মোহামেডানের বিপক্ষে জ্বলে উঠতে পারবেন কি না, সেটাই প্রশ্ন। জনাথন ফার্নান্দেজের সঙ্গে জুটি বাঁধার সম্ভাবনা রয়েছে উজবেক আসরর গফুরভের। রক্ষণভাগে থাকবেন আরেক ব্রাজিলিয়ান ডেসিয়েল এলিটস ডস সান্তোস। সব মিলিয়ে চার বিদেশিই নামার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রথম লেগের শেষ ম্যাচ ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুলের কাছে হারলেও মোহামেডানের চার বিদেশি এমানুয়েল টনি, মোজাফরভ মোজার ভজন, এমানুয়েল সানডে ও অধিনায়ক সুলেমান দিয়াবাতে দুর্দান্ত খেলে যাচ্ছেন। মূলত তাদেরই পারফরম্যান্সে দল সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। এদিকে আবার পুলিশে খেলে যাওয়া ভেনেজুয়েলার অ্যাডওয়ার্ড এনরিক মরিলোকে অন্তর্ভুক্ত করেছে মোহামেডান। তাকে নামাবে কি না, সেটাই প্রশ্ন। মরিলো খেললে দিয়াবাতে বা সানডেকে সাইড বেঞ্চে বসে থাকতে হবে। সব মিলিয়ে দল সাজিয়ে রেখেছে কিংস ও মোহামেডান। কোচ আলফাজ আহমেদও ভ্যালিরিউ তিতা শিষ্যদের কোন কৌশলে খেলাবেন সেটাই প্রশ্ন। ২৬ এপ্রিল মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচ। ২ মে বসুন্ধরা কিংস খেলবে আবাহনীর বিপক্ষে। কেউ কেউ বলেন, তিন ম্যাচের ওপর শিরোপার ভাগ্য নির্ধারণ করছে। তিন ম্যাচের গুরুত্ব অনেক, তবে অন্যদের বিপক্ষে ম্যাচের গুরুত্ব রয়েছে। এখানে তিন দল পয়েন্ট হারাবে না, তা কি নিশ্চিত করে বলা যায়? আবার ১৭তম রাউন্ড পর্যন্ত মোহামেডান এগিয়ে থাকলে তাদের শিরোপা অনেকটাই নিশ্চিত বলা যায়। শেষ ম্যাচ যে ফকিরেরপুলের বিপক্ষে। প্রথম লেগে হারলে শিরোপা নিশ্চিত ম্যাচে মোহামেডান ভুল করবে তা মনে হয় না।