I had a dream, which was not all a dream. -Byron
‘ওকে, ওকে, ওকে গো?’
মাঝে মাঝে আমারও এমন হয়। কাটে নির্ঘুমরাত। কাকে যেন খুঁজি আঁতিপাঁতি। ছুটে যাই খোলা জানালায়। দেখি শূন্যবাগান- কেউ নেই! তবে শুনেছি কি ভুল? এ কি অশরীরী কুহকেরা ডেকেছিল তুমুল? দ্রিম দ্রিম দামামা বেজেছিল বুকে। উথালপাথাল করি ব্যালকনি! খোলা ছাদ! শূন্য অলিন্দে মাতাল হাওয়া আহাজারি করে! বিপন্ন হই আমি সুখী সংসারে!
অবশেষে শেষ হয় রাত। ভোরের আবছা আলোয় কামিনীর ঝোপে শিস দেয় একটি দোয়েল। নিশিরাত আলোতে হারায় -বুকে বিঁধে প্রাণঘাতী শেল! দিবালোকে পোড়ে স্বপ্ন আমার, হেল! হেল!
আবার কখনো আবলুশ আঁধারে স্তব্ধবৃক্ষের ঘন কুয়াশায় কাকে যেন দেখি আমি সফেদ কাচের মতো স্বচ্ছ হাওয়ায় উড়ছে তার অলকাভরণ! হাতছানি দিয়ে ডাকে সেই নারী, হে আমার নপুংশকপ্রেমী, শর্ত রাখোনি তুমি, দগ্ধমুখ দেখেছিলে মহামায়ার কাকজ্যোৎস্নায়। আর্তনাদ করেছিলে ভয়ে! অতএব বিদায় রাজীব, বিদায় এবার! ফিরে আসব না কোনো দিন আর! বাইরে তখন কেবল অচিন আঁধার!!
তবে কি আমিই সেই রাসভ রাজীব? আবার এসেছি ফিরে এই দুনিয়ায় জাতিস্মর হয়ে? কুহুকিনী মহামায়া চিতার থাবার মতোন করে ক্ষত আমার সুচাগ্র অবয়ব- সহস্র নার্ভ! যাতনায় দগ্ধ হই, উল্লম্ফ করি। বিষবৎ দাবানলে পুড়ি!
এবং আবার কোনো এক ধোঁয়া ধোঁয়া রাতে কে যেন ওড়ায় আঁচল জানালার পর্দায়! ক্যালেন্ডার ওড়ে। মত্তরাত! বোশেখের পাগল হাওয়া দেবদারু বনে শন শন শব্দ করে, হে পাষাণ্ড পুরুষ, চেনো গো আমায়? -আমি কুমুদিনী-‘নষ্ট শসা’র মতো পচে গেছি অবিরাম ধর্ষণে। অথচ আমার আরাধ্য ছিল রজনীগন্ধার সোনালি জীবন। হায়, ব্যর্থ হলো সব! উচ্ছিষ্ট আমি- ছুঁয়ো না, ছুঁয়ো না আমায়! -এই বলে সেই নারী নিমেশে ঝড়ের বেগে মিলায় দিগন্তে একঝাঁক সারসের উড়ন্ত কাতারে- যায় উড়ে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে!
কে এই নারী? কার আর্তরব এইসব নীল নীল রাতে আমায় সুচাগ্র করে রাখে? এ কি তবে সেই অদেখা পাখির উৎসব? একঝাঁক সারসের মিথ্যে কলরব? নাকি বন্দিনী কেউ কেঁদে মরে আমার বুকের খাঁচায় বারোমাস? -ঝরে পড়ে জল- কি বেদনার্ত আকাশ!!
কুমুদিনী, কোথায় তুমি?- ক্ষমা কর ক্ষমা কর! আমি নই পাষাণ্ড মধুসূদন। অথবা নই আলফ্রেড প্রুফ্রক। গোলাপে কেরোসিন ঢেলে দুর্গন্ধ করিনি তোমায়- ফিরে এসো নারী, প্রগাঢ় বাহুবন্ধনে মত্ত হই দুজনে- তুমি আর আমি অন্তহীন মেঘেদের বনে!
তবু আসে না তো কেউ। কেবল একঝাঁক পরিযায়ী পাখির আর্তরব চিরে ফেলে আঁধার আকাশ।
অতঃপর দোতলায় উঠে আসি আমি- সেখানেও নেই কেউ অন্ধ গুহায়! তখন অনুভবে তোমারে পাই দুখিনী ইরানীবালা আমার-বন্দি রয়েছ তুমি হাজার বছর আঁধার ভুবনে- ঠান্ডা দেয়ালের গুপ্তগহ্বরে! এবার এ নিরেট দেয়াল ভেদ কর, বেরিয়ে এসো তুমি এলেন পো’র বিমূর্ত বেড়ালের মতো। হাতে হাত, ঠোঁটে ঠোঁট, এসো, কবোষ্ণ কেলিতে মগ্ন হই তুমি/আমি। জেনে নাও তুমি এই তো চান আমাদের অন্তর্যামী!
হায়, মিথ্যে প্রত্যাশা! মিথ্যে ভালোবাসা!! চকিতে শুনি দিঘির কালোজলে তরঙ্গ তুলে মিলিয়ে যায় অদৃশ্য নারীর নূপুরের ঝংকার। পূর্ব গোলার্ধে তখন উঁকি দেয় কমলারং রোদ। আমি মেহের আলীর মতোন করাঘাত করি বুকে, ঝুট হ্যায়! সব ঝুট হ্যায়! তখন দিবালোকে বিদ্যুৎ ঝলকায় রোদে পোড়ে দুঃখী ভূলোক!
এমনি করে সক্রুদ্ধ শোকে শুকোয় আমার স্বপ্নশিশির! কুহকের মায়াজালে বিদ্ধ হয় অর্জুনের সুতীক্ষè তীর!
হে পাঠক-পাঠিকা, আমায় উতরোল করে এসব বিমূর্ত প্রেমিকারা প্রতি রাতে অন্তহীন প্যানোরমার মতো। -কেন? কেন? আমার ‘অন্তর্গত রক্তের ভেতর কোনো এক বোধ কাজ করে? -ক্লান্ত করে?’ এই ভূতগ্রস্ততার কী নাম দেব আমি? শব্দতাড়িত? ইনসমনিয়া? এ পেশেন্ট অব সিজোফ্রেনিয়া? -কনফ্লিক্ট বিটুইন রিয়ালিটি অ্যান্ড ফ্যান্টাসি? আই ডুন নো, ডুন নো! মাংসল দেহ নয়- আমার আরাধ্য কেবল অন্তহীন স্বপ্নে বেঁচে থাকা। হ্যাঁ, সুনীল স্বপ্নে বেঁচে থাকতে চাই আমি প্রতিপল প্রতিক্ষণ। আমরণ!
রবি, তোমার অতলান্ত ‘বিজন বেদনা’কে বুঝি। মহাশপ্ত তুমি-শাপগ্রস্ত করেছ আমারেও। এ অলৌকিক ‘বিজনবেদনা’ আমারেও কুরে কুরে খায়! মেহের আলী সে তো তুমি এবং আমি। বল কবি আমাদের সুনীল স্বপ্নগুলো মিথ্যে হবে তবে? সুচাগ্র স্নায়ুর ভেতর যার বসবাস? রবি, একি তোমার কাঠের মতোন নির্বোধ অনুভূতিহীন বস্তুজীবনের কাছে আশ্রয়? আত্মসমর্পণ? ‘সব ঝুট হ্যায়?’ -সত্য তবে কী? আমরণ স্বপ্নহীন বেঁচে থাকা? না না, রবি না, বেঁচে থাকতে চাই আমি স্বপনে প্রতিপল প্রতিক্ষণে। এ মাটিতে নয়, দ্যাখো ঊর্ধ্বলোকে রাতুল ভুবনে স্ফুরিত হয় আমার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে। বুকে বেঁধে রাখি অবিশ্বাস্য আত্মবিশ্বাস!!
তাই হে আমার সুগোপন ফরবিডেন প্রেমিকারা এসো, সঙ্গোপনে এসো, মূর্ত করে তোলো আমার নৈশব্দের বিথোভেন ‘ব্লু দানিয়ুব’ গ্রাস করুক আমার বুভুক্ষু অবয়ব-সঘন স্বপ্নে দগ্ধ হই দুই জনে! এসো কাকজ্যোৎস্নায় মূর্ত পৃথিবীতে বিমূর্ত বাঁচি এবং অন্তহীন বিস্ফোরণে মুহুর্মুহু অস্তিত্বকে জ্বালি! তাই নম্রপায়ে এসো, সন্তর্পণে এসো, আঁচলে নূপুর বেঁধে রাধিকার মতো এসো। ভয় নেই নারী, জেনে নাও আমিও এক দ্বিতীয় সালভাডর ডালি।