একটা আশ্চর্যসুন্দর সময় কাটিয়েছিলাম আমরা। পরগাছার মতো বেড়ে
ওঠা একদল বেড়াল আমরা আস্তে আস্তে হয়ে উঠেছিলাম বাঘ,
আমাদের হাতের তালুর নরম নড়বড়ে রেখাগুলো সৌভাগ্যের চিহ্ন হয়ে
কপালে গিয়ে ঠেকেছিল, রাজমাতার আশীর্বাদে আমরা হয়ে উঠেছিলাম
দেশমাতার সত্যাগ্রহ অনুচরের দল, প্রশস্তিমগ্নতা ছিল আমাদের ধ্যান।
রাজসভায় আমরা কেতাদুরস্ত হয়ে আসন গ্রহণ করতাম, আমাদের
পোশাক তৈরি হতো লন্ডনের টেইলারিং শপে, আমরা পান করতাম
নরওয়ের সুস্বাদু পানি, দেশ-বিদেশে আমাদের অগুনতি বাড়িঘর ছিল,
তার অভ্যন্তরীণ শোভা আর স্থাপত্যকলা ছিল মুগ্ধ হয়ে দেখবার মতো।
রাজমাতার রাজকোষ থেকে একফোঁটা অমৃত পান করতে বিলম্ব হয় নি
আমাদের, ক্ষুধার স্ফীতি ছাদ আর আকাশ ছিন্ন করে মহাকাশ ছুঁয়েছিল,
আমরা পাল্লা দিয়ে খেয়েছিলাম আস্ত আস্ত ব্যাংক, ভল্টের বিদেশি
ডলার-পাউন্ড, পকেট ভরে তুলে নিয়েছিলাম রাজ্যপাট-নদীনালা-খালবিল,
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর গর্ভ থেকে জন্ম নিচ্ছিল কোটি কোটি টাকা, আমরা
জানতাম টাকাই জন্ম দেয় চকচকে টাকা, চিরস্থায়ী যৌবন লাভের জন্য
আমরা বসে থাকতাম চলমান চাকাওয়ালা টাকার চেয়ারে।
সেই আশ্চর্যসুন্দর সময়ে আমাদের বুকে কোনো কষ্ট ছিল না, ভয় ছিল না,
আমাদের চারপাশে নিশ্ছিদ্র দেয়াল তুলে রেখেছিল উর্দিপরা পাহারাদার,
কখনো হেলমেটপরা সাহসী তরুণের কনভয়, আমরা হাত ঘষলেই
ম্যাজিকের মতো মাটি থেকে বেরিয়ে আসত টাকার ফোয়ারা, এক
তুড়িতেই জনসভার জন্য এক লক্ষ মানুষ উড়ে এসে জমা হতো উদ্যানে,
এক ফুঁতেই উড়িয়ে দিতে পারতাম দশ লক্ষ মানুষের ক্ষুধার্ত স্লোগান।
মার্বেলের মতো সময় গড়িয়ে যায়, একটা কপ্টারের ডানা মেলবার
আওয়াজ বাতাসে মিলিয়ে যাওয়ার আগেই আমাদের চোখ থেকে উড়ে যায়
আলোর পৃথিবী, পাথরের মতো এখন ভারী ঠেকছে একটা ছোট্ট হ্যান্ডকাফ।