যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। বিশ্বের সব দেশের ওপর আরোপ করা বাণিজ্য শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করলেও চীনা পণ্যে শুল্ক বাড়িয়েই যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সবশেষ গত বুধবার মার্কিন পণ্যে চীনের ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের জবাবে চীনা পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশে উন্নীত করে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যকার পাল্টাপাল্টি অবস্থান শুধু দুই দেশের সম্পর্ককেই নাড়া দিচ্ছে না, বরং এর প্রভাবে টালমাটাল বিশ্ববাণিজ্য। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক, বিশ্বের বিভিন্ন পুঁজিবাজারে পতন এবং জ্বালানি তেলের দাম কমে চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে এই সংঘাত বিশ্ববাজার, সরবরাহ শৃঙ্খল, মুদ্রা বিনিময় হার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে মত বিশ্লেষকদের।
সবশেষ চীনের ওপর আরোপিত বাণিজ্য শুল্ক ১০৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গভীর রাতে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। পাল্টাপাল্টি শুল্ক জারি করে যুক্তরাষ্ট্রকে চীন অসম্মান করেছে অভিযোগ করে ট্রাম্প বলেন, বিশ্বের বাজারে চীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি যে অসম্মান প্রদর্শন করেছে, তার জেরে আমি যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের চীনা পণ্যের ওপর ধার্যকৃত শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত এখন থেকেই কার্যকর হবে। চীনের বোঝা উচিত যে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশকে অসম্মান করার দিন শেষ হয়ে গেছে। এর আগে, গত বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পাল্টা হিসেবে সব ধরনের মার্কিন পণ্যের রপ্তানি শুল্ক বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশ নির্ধারণ করে চীন। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পাল্টা হিসেবে সব ধরনের মার্কিন পণ্যের রপ্তানি শুল্কের পরিমাণ ৮৪ শতাংশে উন্নীত করেছে চীন। মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপিত এ শুল্ক ১০ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। চলতি বছর মার্চে প্রথমবার চীনের সব ধরনের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে ২ এপ্রিল এক ঘোষণায় তিনি জানান, চীনের ওপর ধার্যকৃত শুল্ক ৩৪ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে তার পরের দিনই মার্কিন পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে বেইজিং। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ৭ এপ্রিল নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক বার্তায় ট্রাম্প বলেন, বেইজিং যদি ৮ এপ্রিলের মধ্যে এই শুল্ক প্রত্যাহার না করে- তাহলে সব ধরনের চীনা পণ্যের ওপর রপ্তানি শুল্ক আরও ৫০ শতাংশ বাড়ানো হবে এবং ৯ এপ্রিল বুধবার থেকে তা কার্যকর হবে। বেইজিং ট্রাম্পের হুমকিতে সাড়া না দেওয়ায় ৯ এপ্রিল থেকে চীনা পণ্যের ওপর ১০৪ শতাংশ শুল্ক জারি করে। জবাবে মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশে উন্নীত করে চীন। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশে উন্নীত করে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৪৩ শতাংশই দখল করে রয়েছে দুই দেশ- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। যদি তারা সর্বাত্মক বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং সেটা তাদের প্রবৃদ্ধিকে ধীর করে দেয় কিংবা দুই দেশকে আর্থিক মন্দার কবলে পড়ার দিকে ঠেলে দেয় তাহলে তার প্রভাব বিশ্বের অন্যান্য দেশেও পড়তে পারে। কারণ এর প্রভাব সম্ভাব্য ধীর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির আকারে অন্যান্য দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বৈশ্বিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়াও এর একাধিক সম্ভাব্য প্রভাব থাকতে পারে। চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব কিন্তু বিশ্বব্যাপী দেখা যেতে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সিংহভাগ অর্থনীতিবিদ মনে করেন এই প্রভাব কিন্তু অত্যন্ত নেতিবাচক হবে।