আমার এক ছোটভাই বলল, এমনিতেই একটু টানাটানি যাচ্ছে। মানে হাত খালি আরকি। এই অবস্থায় যদি আবার বাড়তি খরচ এসে ঘাড়ে পড়ে, তখন কেমনটা লাগে? আমি বললাম, খরচ তো আর বলে কয়ে আসে না। যে কোনো সময় ঘাড়ের ওপর এসে পড়তেই পারে। এতে মন খারাপ করা যাবে না। ছোটভাই বলল, আপনি মনে হয় ব্যাপারটা ধরতে পারেননি। আমার ঘরে যে এসিটা আছে, সেটা এক টন এসি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি যা, তাতে মনে হচ্ছে একটন এসিতে চলবে না।
দেড় টন তো লাগবেই, দুই টনও লাগতে পারে। কেন জানেন? কারণ, প্রতি মুহূর্তে টিভিতে, ফেসবুকে গরম খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব গরম খবরের উত্তাপে পরিবেশ এমন হয়ে যাচ্ছে যে, এসি ঠান্ডা করতে আরেকটা এসি লাগবে কি না ভাবছি। আমি বললাম, গরম খবরের উত্তাপে যে বাড়তি গরমের সৃষ্টি হচ্ছে, এই গরম এসি দিয়ে কমবে না। এই গরম কমাতে হলে আমাদের একটু সংযত হতে হবে। ছোটভাই বলল, এসব বলে লাভ নেই ভাই। গরম খবরের একটা সিজন চলছে এখন। বলতে পারেন এখন আমরা গরম খবর শোনার মুডে আছি। যে কারণে যেটা শুনি, সেটাকেই গরম খবরের কাতারে ফেলি। যেমন- ধরেন গতকাল নরমাল একটা কথা বললাম, সবাই এটাকে এমন গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করল, কথাটা আর কথা থাকল না। হয়ে গেল গরম খবর। বললাম, আমার এক ভাতিজা জন্মের পর দীর্ঘদিন শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ায়নি, কারও সঙ্গে কথাও বলেনি। আমার কথা শুনে সবার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। সবার একটাই প্রশ্ন, বলিস কী! একটা মানুষ দীর্ঘদিন শোয়া থেকে উঠে না দাঁড়িয়ে, কারও সঙ্গে কথা না বলে কীভাবে থাকতে পারে? এটা কি সম্ভব? আমি বললাম, ওহে বোকার দল, এটা সম্ভব মানে খুবই সম্ভব। জন্মের পর তোরা কি শোয়া থেকে উঠে দাঁড়াতে পারতি? তোরা কি কথা বলতে পারতি? এবার সবাই থ হয়ে গেল। বুঝল, হুদাই আমার কথায় অবাক হয়েছিল। মূলত ব্যাপারটা খুব নরমাল। আমি বললাম, তার মানে তুই বলতে চাচ্ছিস নরমাল বিষয়কেও আমরা আজকাল গরম খবরের আওতায় ফেলে দিচ্ছি? ছোটভাই বলল, তা তো বটেই।
তবে চারপাশে গরম খবরেরও কিন্তু অভাব নেই। যেগুলো সত্যিকার অর্থেই গরম খবর। বিশেষ করে আমার বউয়ের কাছ থেকে যে খবরগুলো পাই, সেগুলো গরম খবর। আমি বললাম, দুই একটা উদাহরণ দে। ছোটভাই বলল, পাশের বাসার ভাবি নাকি ডায়মন্ডের নাকফুল কিনেছে। আমার বউয়ের দৃষ্টিতে এটা গরম খবর। আর আমিও সেটাকে গরম খবর বলেই মেনে নিয়েছি। কেন জানেন? কারণ, পাশের বাসার ভাবি ডায়মন্ডের নাকফুল কিনেছে মানে আমার বউয়েরও চাই। আর এটা কেনার কথা চিন্তা করতে গিয়ে আমার চান্দি এই পরিমাণ গরম হয় যে, পুরো ব্যাপারটাই পড়ে যায় গরম খবরের আওতায়। মোটকথা, চান্দি গরম তো খবরও গরম। আমি বললাম, গরম খবরের বিষয়টাকে তোর বউয়ের নাকফুলের বিষয়ের সঙ্গে গুলিয়ে ব্যাপারটাকে হালকা বানিয়ে ফেললি। এটা ঠিক না। আসলেই কিন্তু দেশে এমন সব ঘটনা এখন ঘটছে, যেগুলোর প্রত্যেকটাই গরম খবর। ছোটভাই বলল, এই জন্যই তো শুরুতে এসি কেনার কথা বলেছিলাম। সমস্যা নেই, এসি যেহেতু দামি জিনিস, এত দামি জিনিস আপাতত না কিনলেও চলবে। সস্তা একটা জিনিস দিয়ে আপাতত আত্মরক্ষা করি।
আমি বললাম, জিনিসটা কী? ছোটভাই বলল, তুলা। কানে গুঁজে রাখব। গরম খবর শুনবও না, চান্দিও গরম হবে না। উম শান্তি, ঘুম শান্তি। আচ্ছা, ভালো তুলা কোথায় পাওয়া যায়? আমি বললাম, বালিশে।