গানে আমরা শিল্পীকে এমন বলতে শুনেছি, ‘দেখা না দিলে বন্ধু কথা কইও না’। আর বাস্তবে আমরা দেখি অন্য ব্যাপারস্যাপার, ফেসবুক না হলে বন্ধু কথা কইও না। মানে কথা বলার ক্ষেত্রে শর্ত প্রযোজ্য। কী শর্ত? প্ল্যাটফর্ম বা মাধ্যমটা হতে হবে ফেসবুক। মোটকথা, সরাসরি বা সামনাসামনি কোনো কথা বলে পারবো না বাপু। যা কিছু বলার ফেসবুকেই বলবো। বলছেও। কারা বলছে, কীভাবে বলছে, সেটা, ‘তুমিও জানো, আমিও জানি’। তবু কিছু উদাহরণ না দিলে চলে না। আমার এক ছোট ভাই বলল, পরিস্থিতি খুবই জটিল। আমার প্রতিপক্ষ আমার গায়ে হাত দিল, অথচ আমি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারলাম না। আমি অবাক হয়ে বললাম, বলিস কী! কেউ তোর গায়ে হাত দেবে আর তুই কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবি না, এটা কেমন কথা? এখন তুই আমাকে বল কেন ব্যবস্থা নিতে পারিসনি, কী সমস্যার কারণে ব্যবস্থা নিতে পারিনি। ছোট ভাই বলল, একজনকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু সে ফোন ধরছিল না। আমি বললাম, কাকে ফোন করেছিলি? মানে এমন কাউকে ফোন করেছিলি, যাকে নিয়ে বিচার-শালিস বসানোর ব্যবস্থা করতি? ছোট ভাই বলল, আরে না। এসবের কথা কেন আসছে? আমি তো ওইসব ব্যবস্থা নিতে চাইনি। বা নিলেও সেটা পরে নিতাম। আমি নিতে চেয়েছিলাম সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থাটা। কিন্তু যাকে ফোন দিচ্ছিলাম, সে ফোন ধরছিল না বলে সব প্ল্যান ভেস্তে গেল। আমি এবার অতিআগ্রহে জিজ্ঞেস করলাম, তা এই মানুষটা কে, যাকে তুই ফোন দিচ্ছিলি? ছোট ভাই বলল, মানুষটা হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে কিনা আমার বাসায় ব্রডব্যান্ড মানে ইন্টারনেট কানেকশন দেয়। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোর প্রতিপক্ষ তোর গায়ে হাত দিল। আর তুই ফোন দিচ্ছিলি ইন্টারনেটের লোকটাকে। কাহিনি কী? বুঝলাম না তো কিছু! ছোট ভাই বলল, ভাই, কেন আপনি বুঝতে পারছেন না ওই সময় কোনো কারণে নেটের লাইনটা ছিল না। এজন্য লোকটাকে আমি ফোন দিচ্ছিলাম। যাতে সে লাইনটা ঠিক করে দেয় আর আমি ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিতে পারি। স্ট্যাটাস তো না, একটা লাইভ করতে চেয়েছিলাম। সবাইকে জানাতে চেয়েছিলাম আমার প্রতিপক্ষ আমাকে মেরেছে। কিন্তু হায়, পারলাম না নেটের অভাবে। আমি এবার ডাবল অবাক হয়ে বললাম, মার খাওয়ার বিষয়টা ফেসবুকে লাইভ করা বা স্ট্যাটাস দেওয়াটা তোর কাছে বড় হয়ে গেল? ছোট ভাই বলল, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে না? আমি কিছু বললাম না। এর পরদিন এই ছোট ভাইয়ের সাথেই চা স্টলে দেখা। তাকে চা খাওয়ার অফার করলাম। সে বেঞ্চে বসল। কিন্তু বারবার তাকাচ্ছিল মোবাইলের দিকে। আমি জিজ্ঞেস করলাম জরুরি কোনো ফোন আসবে কি না। ছোট ভাই বলল, ফোন আসবে না। তবে একটা ছবি আপলোড হবে। সেই অনুযায়ী আমাকে বাজারসদাই করতে হবে। আমি বললাম, তোর কথাটা ঠিক বুঝলাম না। একটু বুঝিয়ে বল। ছোট ভাই বলল, বাসায় মেহমান আসার কথা। কিন্তু কয়জন আসবে, জানি না। বউকে জিজ্ঞেস করলাম, বলল না। এজন্য অপেক্ষায় আছি গ্রুপ ছবি দেখার জন্য। মেহমানরা বাসায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বউ একটা গ্রুপ ছবি তুলে ফেসবুকে দেবে তো! আমি সেটা দেখে জানতে পারব মেহমান ঠিক কজন এসেছে এবং কয় কেজি মাংস বা কয়টা মাছ কিনতে হবে। আমি কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থাকলাম।
সামনাসামনি কিছু আর না বলি। যা বলার ফেসবুকেই বলব!