একবিংশ শতাব্দীতে এমন কোনো দিন কি কেটেছে যেদিন আপনি স্মার্টফোন হাতে না নিয়ে কাটিয়েছেন? খুব কম, তাই না? আর এর পেছনে রয়েছে এক চমকে দেওয়ার মতো কারণ—‘অ্যাটেনশন ইকোনমি’ বা মনোযোগ অর্থনীতি। আজকের দিনে স্মার্টফোন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি হয়ে উঠেছে আপনার মনোযোগ বিক্রির অন্যতম প্ল্যাটফর্ম।
কি এই মনোযোগ অর্থনীতি?
বর্তমানে প্রতিটি ডিজিটাল কনটেন্ট, ভিডিও, রিলস, অডিও কিংবা বিজ্ঞাপন—সবকিছুই এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে আপনি স্ক্রল থামাতে না পারেন। আপনি যখন কোনো কিছুর উপর ক্লিক করেন, লাইক দেন বা মন্তব্য করেন, তখন আপনার মনোযোগকে পুঁজি করে কেউ না কেউ আয় করছে অর্থ। এই প্রতিযোগিতায় জিতে নেয়ার জন্যই প্রতিনিয়ত আপনাকে বেধে রাখা হচ্ছে ফোনের পর্দায়।
বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের সময় ও মনোযোগের বিনিময়ে তৈরি হয়েছে বিলিয়ন ডলারের ডিজিটাল ইকোনমি, যাকে বলা হয় অ্যাটেনশন ইকোনমি। এখানে আপনি আর আপনার সময়ই পণ্য। আপনি যা দেখেন, শুনেন বা পড়েন—তা সবই ডিজাইন করা হয় আপনার মনোযোগ আটকে রাখতে।
কেন আপনি ফোন ছাড়তে পারেন না?
এই প্রশ্নের জবাব লুকিয়ে আছে প্রযুক্তির অ্যালগরিদম আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহারে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো আপনার পছন্দ-অপছন্দ বিশ্লেষণ করে পারসোনালাইজড কনটেন্ট দেখায়। আপনি যেসব কনটেন্টে বেশি সময় দেন, তেমন কনটেন্টই আবার সামনে আসে। ফলে আপনি নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়েন এক চক্রে—নির্বিচারে স্ক্রলিং, বারবার নোটিফিকেশন চেক করা এবং অবিরাম সময় অপচয়।
এর প্রভাব কতটা ভয়াবহ?
এই মনোযোগের ব্যবসা যত বড় হচ্ছে, ততই হুমকির মুখে পড়ছে আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য। ডিজিটাল আসক্তি এখন বাস্তব এক মানসিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনে কতটা সময় আপনি নিজের পরিবারের সঙ্গে কাটাচ্ছেন বা মানসিকভাবে বিশ্রাম নিচ্ছেন—সে হিসেব ক্রমেই কমে আসছে।
পরিত্রাণের উপায় কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজেকে আগে নিয়ন্ত্রণ করুন, নয়তো প্রযুক্তি আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। আপনার মনোযোগ যেন সহজে বিক্রি না হয়, সেদিকে সচেতনভাবে নজর দিন। সময় ভাগ করে নির্দিষ্ট সময়ে ফোন ব্যবহার, সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স, আর বাস্তব জীবনের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে মনোযোগ দিন।
বিডি প্রতিদিন/মুসা