২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পানি, পয়োনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ) খাতে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে, যা বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন এবং নাগরিকের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এ ছাড়া এ খাতে বরাদ্দ কমতি শুধু উন্নয়ন বাধাগ্রস্তই করবে না, বরং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকেও হুমকির মুখে ফেলবে। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) কার্যালয়ে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
পিপিআরসি, ওয়াটারএইড, এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম, ফানসা, এফএসএম নেটওয়ার্ক ও স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অলসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা এবং সংস্থাগুলোর ‘নেটওয়ার্ক অব ওয়াশ নেটওয়ার্কস’ যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
তাদের বাজেট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ ছিল ১৮২ দশমিক ২৮ বিলিয়ন টাকা, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নেমে এসেছে ১০৯ দশমিক ১ বিলিয়নে। যদিও ২০২৪-২৫ সালের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি আছে, তবু তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।
প্রতিবেদনে বরাদ্দ বণ্টনের বৈষম্যকেও উদ্বেগজনক বলা হয়েছে। ঢাকা ওয়াসা একাই পেয়েছে ৩১ দশমিক ৪ বিলিয়ন টাকার বেশি, অথচ সারা দেশে ওয়াশ সেবা কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্পের জন্যই বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা, যা পুরো ঢাকা ওয়াসা বরাদ্দের প্রধান অংশ। ১২টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে কেবল সাতটি এ খাতে বরাদ্দ পেয়েছে। রাজশাহী, রংপুর, কুমিল্লা ও সিলেট সিটি করপোরেশন বাদ পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে ওয়াশ খাতের চিত্রটি অগ্রগতি এবং স্থায়ী চ্যালেঞ্জের একটি জটিল সংমিশ্রণ। ওয়াশ বরাদ্দে ধারাবাহিক নিম্নমুখী প্রবণতা এসডিজি এবং জাতীয় অগ্রাধিকার লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি গুরুতর হুমকি, যা নাগরিকের নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সেবার অধিকার ব্যাহত করতে পারে।’ প্রতিবেদনে সরকারকে অন্তত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বরাদ্দ ফিরিয়ে আনা, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজেট প্রণয়ন এবং ওয়াশকে জনস্বাস্থ্য ও জলবায়ু সহনশীলতা কাঠামোর সঙ্গে একীভূত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।