রদবদল ও কর্মকর্তাদের নানামুখী গ্রুপিংয়ে অস্থিরতা বেড়েছে কৃষি নির্দেশনার প্রাণকেন্দ্র রাজধানীর খামারবাড়িতে। এর প্রভাব পড়েছে মাঠকৃষিতে। মাঠপর্যায়ে ঠিকমতো নির্দেশনা না যাওয়ায় চলতি মৌসুমের বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল ওঠানো নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। নানা অনিয়ম, অভিযোগ আর দাপ্তরিক অস্থিরতার মধ্যেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) আলোচিত কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পে কর্মরতদের অফিস আদেশ ছাড়াই বের করে দিয়েছেন কিছু কর্মকর্তা। এতে অধিদপ্তরের অন্য পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে নানা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র জানান, এখন মাঠে বোরো মৌসুমের ধান কাটার সময়। বোরো ধান ঠিকমতো ঘরে ওঠাতে না পারলে খাদ্য নিয়ে তৈরি হয় নানা অনিশ্চয়তা। ধান ঘরে তোলা নিয়ে অন্য সময় ব্যস্ত থাকা খামারবাড়ি এখন অনেকটাই ব্যস্ত নিজেদের ভালো পোস্টিং-পদায়ন নিয়ে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর নিজেদের ফায়দা নিতে ব্যস্ত সবাই। সম্প্রতি অধিদপ্তরের প্রশাসন ও অর্থ উইংয়ের উপপরিচালক ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রশীদকে বদলির প্রেক্ষাপটে তাঁর অনুসারীরা খামারবাড়ির গেটে তালা, সড়ক অবরোধ ও সংবাদ সম্মেলনের মতো কর্মসূচি পালন করেন। এর পর থেকেই বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কর্মকর্তারা কাজ বাদ দিয়ে নানা গ্রপিংয়ে ব্যস্ত। অনেকে ঠিকমতো অফিসও করেন না। এরই মধ্যে কয়েক দফায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি প্রকল্পে চলছে নানা অরাজকতা। হাওরে আগাম বন্যা বা ঝড়তুফান থেকে কৃষকের ধান ভালোভাবে ঘরে তুলতে সরকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প নিলেও শুরু থেকে অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তিন দফায় প্রকল্প পরিচালক পাল্টানো হয়েছে। চতুর্থ প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে মঞ্জুর-উল-আলম আরও বেশি অন্যদের ছাড়িয়ে গেছেন। নিয়োগ পেয়েই ওই প্রকল্পে কর্মরত ডিপিডিদের অফিসছাড়া করেন আদেশ ছাড়াই। পরিবর্তে নওগাঁর কৃষি প্রকৌশলী মো. মাজহারুল ইসলাম ও সিলেটের কৃষি প্রকৌশলী মো. ইখলাস আশরাফকে চেয়ারে বসিয়ে দেন। অফিস আদেশ ছাড়াই তাঁকে অফিস করতেও দেখা গেছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে খামারবাড়িতে প্রকল্প অফিসে পাঁচজন কর্মকর্তাকে অফিস ছাড়তে বাধ্য করেছেন। অফিসছাড়া কর্মকর্তারা কোথাও অফিস করতে না পারায় কাজ স্থবির হয়ে যাচ্ছে বলেও জানা গেছে। আবার নতুন করে কারও নামে আদেশও জারি হচ্ছে না। এতে কাজে স্থবিরতা রয়েছে। দপ্তর থেকে কর্মকর্তাদের ‘অফিসছাড়া করার’ বিষয়ে পিডি মঞ্জুর-উল-আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে অধিদপ্তর থেকে। এর জবাব দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মঞ্জুর-উল-আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যারা অফিসছাড়া তারা মাঝেমধ্যে আসেন। অনেকেই ভয়ে অফিস করেন না কারণ তাদের অনেকেই দুর্নীতি করেছেন।’
গত মাসে জোর করে অফিস ছাড়ানোর ঘটনা ছিল কৃষি মন্ত্রণালয়েল অধীন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালককে (ইডি) বের করে দিয়ে চেয়ার দখলের ঘটনায় এক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর এবং দুই প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করে মন্ত্রণালয়। পরে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়।