দলের ভাবমূর্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থান নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে তাঁর দল। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেছেন, কমিটি গঠন কিংবা আধিপত্য বিস্তারসহ কোনো ধরনের সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলাই বরদাশত করা হবে না। যত বড় ত্যাগী নেতাই হোন না কেন, যতই মামলা কিংবা জেলজুলুমের শিকার হোন না কেন, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকলে সাংগঠনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। দলের নাম ভাঙিয়ে দখল, চাঁদাবাজি, হুমকিধমকি, মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতি থেকে শুরু করে যে কোনো ধরনের অপকর্মের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এসব বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও কথা বলছেন এবং এ বিষয়ে তীক্ষè দৃষ্টি রাখছেন। দলের সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে কমবেশি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দল এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের তিন সহস্রাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আড়াই সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পদপদবি স্থগিত করা হয়েছে ২০০-এরও বেশি। দলটির দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ব্যবস্থার মধ্যে পদাবনমনও রয়েছে। এ ছাড়া সাংগঠনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন বক্তব্যে বিতর্কের সৃষ্টি হওয়ায় সম্প্রতি বিএনপির দুজন ভাইস চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক রুদ্ধদ্বার অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বক্তব্যে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি পুনরায় সতর্কবার্তা দেন তারেক রহমান।
জানা যায়, দলের এই শীর্ষনেতা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মানুষের মন জয়ের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেন। মানুষ পছন্দ করে না এমন কর্মকাণ্ড তথা যে কোনো ধরনের অপকর্ম রোধে আরও কঠোর অবস্থানের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘বিএনপি আগামীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসছে’-এই আত্মতৃপ্তি নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় ঠিক করতে হবে। ৩১ দফা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রথম ১৮০ দিনের অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা কী হবে, এরই মধ্যে তা ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম দেড় বছরে দেশে ১ কোটি কর্মসংস্থান বা চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। ২০৩৪ সালে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করেছে দলটি।
জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে বিএনপি সরকার গঠন করলে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগের বিচারসহ তাদের আমলে দুর্নীতি, লুটপাট, টাকা পাচার, ভোট ডাকাতি, গুম-খুনের প্রতিটি ঘটনার বিচারের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান দলের কান্ডারি তারেক রহমান।
জানা যায়, ১৩ জুন ‘লন্ডন বৈঠক’-এর পর নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির ঐকমত্য হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় এমন অবস্থান গ্রহণ করেন তারেক রহমান। এরই মধ্যে শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে কমিটি গঠন নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় হাইকমান্ডের নির্দেশে দলের দুই নেতাকে পুলিশে দিয়েছে বিএনপি। দলটির প্রতি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষায় যেন চিড় না ধরে, তা রক্ষা করতে এমন কঠোর অবস্থান অব্যাহত রাখবে বিএনপি। লন্ডন বৈঠকের মধ্য দিয়ে দেশে স্থিতিশীল অবস্থা ফিরে এলেও যারা এটা চায়নি, তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের আইনের হাতে তুলে দিতে হবে।
জানা যায়, গত রবিবার নরসিংদীর পলাশে একটি শোডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল কবির জুয়েলের সমর্থক এবং ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ছাত্রদলের এক কর্মী গুলিবিদ্ধসহ তিনজন আহত হন। একই দিন গাজীপুরের কালিয়াকৈরে উপজেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং ককটেল বিস্ফোরণে ১০ জন আহত হন।
দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম বলেন, ‘দুই-চারজন অপকর্মকারীর জন্য বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এর দায়দায়িত্ব কেন আমরা নেব? রাজনীতি করি জনগণের কল্যাণের জন্য। নেতা-কর্মীদের শিক্ষা হলো, বিপদে-আপদে জনগণের পাশে দাঁড়ানো। আওয়ামী লীগের মতো মাস্তানি-গুন্ডামি করা নয়।’
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে কোনো অভিযোগ এলে আমরা সেটি আমলে নিয়ে যাচাইবাছাই করছি। ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা পেলেও তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হচ্ছে। প্রমাণিত হলে বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হচ্ছে। পদপদবি স্থগিত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। যে-ই শৃঙ্খলা ভঙের চেষ্টা করবেন তার বিরুদ্ধেই সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজধানী ঢাকা মহানগর থেকে শুরু করে সারা দেশে কঠোর দৃষ্টি রাখছেন তারেক রহমান। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিএনপির হাইকমান্ড তারেক রহমান চান না, দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ তুলে কেউ কোনো রকমের ফায়দা নিক।
বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এইচ এম সাইফ আলী খান বলেন, ‘দলের ভাবমূর্তি নষ্ট ও শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে আমাদের দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর শাখা। কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।’
জানা গেছে, দলে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে এবং শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমানের নির্দেশে নতুন প্রেক্ষাপটের শুরু থেকেই গঠনমূলক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বিএনপি।