প্রতি বছরের মতো এবারও নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সাবদী, মীরকুন্ডি ও দীঘলদী ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। এলাকাজুড়েই রয়েছে শুধু ফুলের বাগান। আর এই ফুল দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, আশপাশ জেলার মানুষও এখানে এসে ভিড় করছেন ফুল দেখার জন্য। বিশেষ করে ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের যেন ঢল নামে এসব এলাকায়। ফুলচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরজুড়েই নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার মীরমুন্ডি, দিঘলদি ও সাবদীসহ কয়েকটি এলাকায় ফুলের চাষ হয়ে থাকে। তবে শীত মৌসুমে প্রায় সবাই ফুলের চাষ করে থাকেন। জন্মদিন পালন, বিয়ে, মৃতের আত্মার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, গৃহসজ্জায় এ ফুল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে প্রতিবছর বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস, বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মতো দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে।
নারায়ণগঞ্জে এ চাহিদার অনেকটাই পূরণ করে থাকে বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদী, দিঘলদী ও মুকুলদী এলাকার ফুল। পাশাপাশি অন্য জেলাতেও এখান থেকে ফুল সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বন্দর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে গাঁদা, গ্লাডিওলাস, চেরি, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা জাতের ফুল। মাঠের পর মাঠ গাঁদা ও গ্লাডিওলাস ফুলের দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। তবে রমজান মাস চলে আসার কারণে চাষিরা কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। দিবসগুলো চলে এলেও এখন পরিপূর্ণভাবে ফুল ফোটেনি। ফলে কেউ কেউ ক্ষতির আশঙ্কাও করছেন। পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে ফুলের বাগান দেখতে এসেছেন শান্তা আক্তার নামে দর্শনার্থী। তিনি বলেন, ফুলের বাগান দেখার জন্যই এখানে আসা। ফুল একটা পবিত্র জিনিস যেটা আমাদের মনকে ভালো রাখে। ফুল দেখলেই আনন্দ লাগে। বিশেষ করে এখানে এলে বাচ্চারা অনেক আনন্দ পায়।
ফুল ভালো লাগার জিনিস। একসঙ্গে অনেকগুলো ফুল দেখলে মন ভালো হয়ে যায়। এখানকার পরিবেশটাও ভালো লাগে।
আমীর আলী নামে এক চাষি বলেন, গত ১০-১২ বছর ধরেই ফুল চাষ করে আসছি। গত বছর ভালোই লাভ হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে এসে ফুল নিয়ে যায়। প্রতিবছরই ভালো ফুল চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু এবছর দেরিতে ফুল ফুটেছে। যে সময় ফুল ফুটবে সে সময় বিক্রি করতে পারব না। ফুলের চাহিদা থাকবে না। তার পরও দেখি কপালে কী আছে।
বন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত বলেন, বন্দর উপজেলার সাবদী, মীরকুন্ডি ও দিঘলদীসহ কয়েকটা গ্রামেই ফুলের চাষ হয়ে থাকে। এ বছর ৮০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা এরকমই ছিল। তবে নগরায়ণের ফলে কয়েক হেক্টর জমি কমতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এ বছর রমজান মাস চলে আসার কারণে কৃষকদের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে যে টার্গেট থাকে সেটা হয়তো পূরণ হবে না। সর্বোপরি এ বছর ফুলের ভালো চাষ হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া ভালো ছিল। আমরা তাদের পরামর্শ দিয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করে থাকি।