৮৮ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রথম লাতিন আমেরিকান পোপ ফ্রান্সিস। ফিলিস্তিন ইস্যুতে সরব ছিলেন এই খ্রিস্টধর্ম যাজক। ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’- অর্থাৎ, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয়েরই আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র থাকা উচিত- অবস্থানকে সমর্থন করে গেছেন ফ্রান্সিস। মৃত্যুর এক দিন আগেও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলেন ফ্রান্সিস। এক কথায় বলা যায়- পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে ফিলিস্তিন এক অকৃত্রিম বন্ধু হারাল। রবিবার খ্রিস্ট ধর্মীয় উৎসব ‘ইস্টার সানডে’ উপলক্ষে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। এদিন ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে খোলা আকাশের নিচে জড়ো হওয়া হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ জনতার সামনে এ আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেখানে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের ১৮ মাসব্যাপী যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট শোচনীয় মানবিক পরিস্থিতির নিন্দা করেন। এদিন নেতানিয়াহু প্রশাসনকে উদ্দেশ করে পোপ ফ্রান্সিস বলেছিলেন, ‘আমি যুদ্ধরত পক্ষগুলোর কাছে আবেদন করছি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করুন, জিম্মিদের মুক্তি দিন এবং শান্তির ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষা পোষণকারী ক্ষুধার্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসুন।’ -এএফপি
শুধু ‘ইস্টার সানডে’র দিনেই নয়; আগেও ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনের সমালোচনা করে গেছেন ফ্রান্সিস। গত জানুয়ারিতে তিনি গাজার পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত গুরুতর এবং লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছিলেন। একই সঙ্গে অঞ্চলটিতে ইসরায়েলি ‘গণহত্যার’ তদন্ত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছিলেন। অ্যাঙ্গিকানস, লুথারানস এবং ম্যাথোডিস্টদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন ফ্রান্সিস। ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টদের তার সঙ্গে শান্তি প্রার্থনায় যোগ দিতে রাজি করিয়েছিলেন। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভ্যাটিকান সিটি। ২০১৫ সালের ১৩ মে ফিলিস্তিনের সঙ্গে প্রথম চুক্তি স্বাক্ষরের ইচ্ছা প্রকাশ করে ভ্যাটিকান সিটি। ২০১৫ সালের ২৬ জুন হলি সি এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৪ সালে পোপ ফ্রান্সিস ভ্যাটিকানে তৎকালীন ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেস এবং ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে আমন্ত্রণ জানান, এক ঐতিহাসিক শান্তি প্রার্থনা আয়োজন করেন। এটি ছিল যুগ যুগ ধরে চলা দুই পক্ষকে শান্তি ও সহাবস্থানের পথে হাঁটাতে তার যুগান্তকারী প্রয়াস। পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন মানবতাবাদী ও সহানুভূতিশীল। তার ধর্মোপদেশে সবসময় থাকত সামাজিক অন্তর্ভুক্তির আহ্বান। একই সঙ্গে সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষের প্রতি মনোযোগ দিতে সরকারগুলোর ব্যর্থতার সমালোচনা করতেন তিনি। ফ্রান্সিস বলতেন, আমরা বিশ্বের সবচেয়ে অসম অংশে বাস করছি। দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, এখনো দুঃখ-দুর্দশা কমেনি। মূলত পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন শান্তিকামী ও যুদ্ধবিরোধী। শুধু গাজায় নয়; দক্ষিণ সুদানের সংঘাত অবসানের জন্যেও সোচ্চার ছিলেন তিনি। যুদ্ধ থামাতে সুদানের নেতাদের আহ্বান জানাতে ২০২৩ সালে তিনি আফ্রিকার দেশটিতে গিয়েছিলেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে ‘অযৌক্তিক এবং নিষ্ঠুর যুদ্ধ’ আখ্যা দিয়েছিলেন তিনি। এ যুদ্ধ অবসানের আহ্বান জানিয়েছিলেন। -এএফপি