ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্থাপনায় হামলা চালানোর কথা নিশ্চিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামলার লক্ষ্য ছিল নাতানজ, ফোরদো ও ইসফাহান—এই তিন কেন্দ্র। ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ-ও এ হামলার কথা স্বীকার করেছে।
আইআরএনএ'র প্রতিবেদনে ইসফাহানের নিরাপত্তা বিষয়ক ডেপুটি গভর্নর আকবর সালেহির বরাত দিয়ে বলা হয়, ইসফাহান ও নাতানজ এলাকায় হামলা হয়েছে। আরেক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে ইরানের ভূগর্ভস্থ ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনাও লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।
এর আগে ১৩ জুন ইসরায়েল আকস্মিকভাবে ইরানের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায়। ইসরায়েল দাবি করে, ইরান শিগগিরই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি চলে যাচ্ছিল। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরানও ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়ে জবাব দেয়। যুক্তরাষ্ট্র শুরুতে ইরানের ইসরায়েলমুখী হামলা প্রতিহত করলেও সরাসরি ইরানে হামলা চালায়নি।
হামলার লক্ষ্যস্থলগুলো
১. নাতানজ সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র
তেহরান থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতানজ। এখানে ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করা হচ্ছিল, যা অস্ত্রমানের খুব কাছাকাছি। ইসরায়েলের আগের হামলায় কেন্দ্রের ওপরিভাগ ধ্বংস হয়েছিল। নতুন হামলায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে ভূগর্ভস্থ অংশের সেন্ট্রিফিউজের বড় অংশও নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)।
২. ফোরদো সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র
তেহরান থেকে ১০০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। পাহাড়ের নিচে অবস্থিত এই কেন্দ্র বিমান হামলার হাত থেকে সুরক্ষিত। বিশেষ ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা ছাড়া এটি ভেদ করা সম্ভব নয়। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্পিরিট স্টিলথ বোমারু বিমান এ হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে।
৩. ইসফাহান পারমাণবিক প্রযুক্তি কেন্দ্র
তেহরান থেকে ৩৫০ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে। এখানে ৩টি চীনা গবেষণা রিয়্যাক্টর রয়েছে। ইসরায়েল পূর্বেও এই কেন্দ্রের কিছু ভবনে হামলা চালিয়েছে। আইএইএ জানিয়েছে, এখানে বিকিরণ বৃদ্ধির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র
বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: ইরানের একমাত্র বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এখানে রুশ উৎপাদিত ইউরেনিয়াম ব্যবহৃত হয়।
আরাক হেভি ওয়াটার রিয়্যাক্টর: প্লুটোনিয়াম উৎপাদনের সক্ষমতা থাকায় ২০১৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী এটি পুনঃনকশা করা হয়েছে।
তেহরান রিসার্চ রিয়্যাক্টর: পূর্বে উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ব্যবহার করলেও বর্তমানে স্বল্প সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ব্যবহৃত হয়।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ হামলার ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। তবে ইরানের প্রতিক্রিয়া ও উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়ে গেছে।
সূত্র: এপি, আরব নিউজ
বিডি প্রতিদিন/আশিক