ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে নতুন করে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্প। বলেছেন, যদি হামাস গাজায় মানুষ হত্যা চালিয়ে যায়, তাহলে আমাদের অন্য কোনো উপায় থাকবে না; আমরা হামলা চালাব এবং তাদের মেরে ফেলব। তবে ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ওই অভিযানগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অংশগ্রহণ করবে না।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে সতর্ক করে ট্রাম্প লিখেছেন, “যদি হামাস গাজায় মানুষ হত্যা চালিয়ে যায়, যা চুক্তির অংশ ছিল না—তাহলে আমাদের আর কোনো বিকল্প থাকবে না; আমরা হামলা চালাব এবং তাদের মেরে ফেলব। এই বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ!”
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে ট্রাম্প স্পষ্ট করেন, এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অংশ নেবে না। তিনি বলেন, “মার্কিন সেনারা গাজায় প্রবেশ করবে না।ওটা আমরা করব না। আমাদের করতে হবে না। আশপাশেই এমন কিছু লোক আছে, যারা আমাদের তত্ত্বাবধানে সহজেই কাজটা সম্পন্ন করবে।”
এই বক্তব্যে ট্রাম্প সরাসরি নাম উল্লেখ না করলেও তার ইঙ্গিত স্পষ্টতই ইসরায়েলের দিকেই।
হামাসের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের এই হুমকি ইঙ্গিত করছে তার অবস্থানের নাটকীয় পরিবর্তনকে। এর আগে তিনি হামাসের গাজায় গ্যাং দমনের পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, “ওরা কয়েকটা গ্যাংকে সরিয়ে দিয়েছে—খুব খারাপ, ভয়ানক গ্যাং। তারা কয়েকজন গ্যাং সদস্যকে হত্যা করেছে এবং সত্যি বলতে, এতে আমি খুব একটা বিচলিত হইনি। এটা ঠিকই আছে। ”
গাজায় সম্প্রতি হামাস ও সশস্ত্র গোত্রীয় সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কিছু প্রাণহানি ঘটেছে। এসব গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা মানবিক সহায়তা লুটপাট করেছে এবং ইসরায়েলের হয়ে কাজ করেছে।
গত রোববারের ওই সংঘর্ষের পর গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, যারা রক্তপাতের সঙ্গে জড়িত ছিল না, সেই গ্যাং সদস্যদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে।
এর আগে জুন মাসে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা স্বীকার করেছিলেন যে, রয়েছে। হামাসকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে তারা গাজার কিছু গ্যাংকে অস্ত্র দিয়েছে, যাদের মধ্যে কিছু গোষ্ঠীর আইএসআইএল (আইএসআইএস)-এর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে।
রোববার ইসরায়েল-সংযুক্ত এক গ্যাংয়ের বন্দুকধারীরা বিশিষ্ট ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সালেহ আলজাফারাওয়িকে হত্যা করে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
এ সপ্তাহের শুরুতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হামাসের সমালোচনা করে অভিযোগ তোলেন যে, হামাস ইসরায়েলি সহযোগিতার সন্দেহে কিছু ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। তিনি একে ‘নৃশংস অপরাধ’ বলে উল্লেখ করেন।
আব্বাসের দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, “যা ঘটেছে, তা একটি অপরাধ, মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং আইনের শাসনের নীতির ওপর গুরুতর আঘাত। ”
তবে গ্যাং সমস্যা ছাড়াও হামাসকে লক্ষ্য করে ট্রাম্পের আরও হুমকি রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে এবং গাজার শাসনব্যবস্থায় তাদের কোনো ভূমিকা থাকবে না। তবে হামাস এসব শর্তে সম্মত হয়েছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, যদি হামাস স্বেচ্ছায় অস্ত্র না ফেলে, তবে তাদের জোরপূর্বক নিরস্ত্র করা হবে। তারা অস্ত্র সমর্পণ করবে। যদি না করে, আমরা করাব। সেটা দ্রুতই ঘটবে, আর হয়তো সহিংসভাবেই।
গত শনিবার থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর তা মোটামুটি টিকে আছে। তবে ইসরায়েল বারবার এই চুক্তি ভঙ্গ করেছে, প্রতিদিনই ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে, এই অজুহাতে যে তারা নাকি ইসরায়েলি সেনাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশ করেছিল, যদিও এসব এলাকা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত নয়।
ইসরায়েল আরও হুমকি দিয়েছে যে, হামাস যদি তার হাতে থাকা বন্দিদের সবাইকে ফেরত না দেয়, তবে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবাহ আবারও সীমিত করা হবে। পাশাপাশি, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ও মিশরের মধ্যবর্তী রাফাহ সীমান্তও এখনো পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয়নি।
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর ট্রাম্প একে ‘নতুন মধ্যপ্রাচ্যের সূচনা’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। তবে তার সর্বশেষ হুমকি সেই আশার ওপর ছায়া ফেলেছে।
সূত্র: আলজাজিরা, নিউইয়র্ক টাইমস
বিডি প্রতিদিন/নাজিম