রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে (বিপিএসসি) ‘ট্যালেন্টস ডেন’ নামের বিশ্বমানের সহপাঠ কার্যক্রম ও ক্রীড়া প্রশিক্ষণ একাডেমির উদ্বোধন করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল পৌনে ১০টায় প্রতিষ্ঠানটির প্রাঙ্গণে কোরআন তেলাওয়াত ও জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
এরপর প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আনিছুর রহমান শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেলুন উড়িয়ে ‘ট্যালেন্টস ডেন’-এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেন।
এসময় তিনি বলেন, ট্যালেন্টস ডেনের লক্ষ্য হলো আমাদের শিক্ষার্থীদের এমনভাবে গড়ে তোলা, যাতে তারা কেবল একাডেমিকভাবে নয়, ব্যক্তিত্ব, সৃজনশীলতা ও দলগত নেতৃত্বেও বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের এই উদ্যোগ শিক্ষাকে শুধু বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে জীবনমুখী, অনুপ্রেরণাদায়ক ও রূপান্তরমূলক করার এক বাস্তব উদাহরণ।
বিপিএসসির পক্ষ থেকে প্রিন্সিপাল অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ট্যালেন্টস ডেন উদ্বোধনের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীদের সামনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। যেখানে তারা নিজেদের প্রকৃত প্রতিভা আবিষ্কার ও বিকাশের সুযোগ পাবে।
তিনি জানান, ট্যালেন্টস ডেনের এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের দূরদর্শী নেতৃত্ব ও উদারতার ফলে। প্রতিষ্ঠানটির সকল শিক্ষার্থী বিনামূল্যে এই প্রশিক্ষণ সুবিধা পাবেন, যা শিক্ষাক্ষেত্রে বসুন্ধরা গ্রুপের এক অনন্য অবদান হিসেবে চিহ্নিত হবে।
এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা স্পোর্টস সিটির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মেজর (অব.) মহসিনুল করিম।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অংশগ্রহণে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। পরে উপস্থিত অতিথিরা বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন। শেষ পর্বে অনুষ্ঠিত হয় স্টুডিও ও মাঠভিত্তিক প্রদর্শনী। অনুষ্ঠান চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ৮ম শ্রেণির (ইংরেজি ভার্সন) শিক্ষার্থী সৈয়দ লামিম আহমেদ বলেন, স্কুলের পক্ষ থেকে সত্যি এটি অসাধারণ উদ্যোগ। আজ তায়কোয়ান্দোসহ নাচ, গান ও চিত্রাংকনের আয়োজন ছিল। পরিবারের সদস্যরা এসেছিল। সবমিলিয়ে খুব ভালো লেগেছে। আশা করছি এই কার্যক্রম থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারবো।
কিন্ডার গার্টেন (ইংলিশ ভার্সন) শাখার শিক্ষার্থী শাইরা রওনাফের মা রুকাইয়া ইসলাম চাঁদনী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাচ্চার স্কুল নিয়ে অনেক উদ্বিগ্ন ছিলাম। কোথাও একাডেমিক ভবন আছে, কিন্তু খেলার মাঠ নেই। আবার কোথাও লেখাপড়া ভালো হলেও সহশিক্ষা কার্যক্রম তেমন একটা নেই। বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে এক জায়গায় সব পেয়েছি। প্রতিটা বাচ্চাকে হাতে ধরে নিয়মানুবর্তিতা শেখাচ্ছে। সব ধরণের খেলার সুযোগ আছে। সব বাচ্চাকে বিনামূল্যে সাঁতার শেখানো হচ্ছে। আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে কারাতে, তায়কোয়ান্দ শেখাবে। এছাড়া নাচ, গান, আবৃতি, আর্ট, বিতর্ক সবকিছু শেখানোর ব্যবস্থা আছে। শুদ্ধভাবে মাতৃভাষায় কথা বলার পাশাপাশি ইংরেজিটা ক্লাশের অংশ হিসেবেই শিখছে। এর বাইরে আরবিসহ আরও ভাষা শেখানো হবে বলে স্কুল থেকে জানিয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে এমন সুযোগ-সুবিধা ঢাকার অন্য কোনো স্কুলে আছে বলে আমার জানা নেই।
তিনি বলেন, শুধু বই পড়া বা জিপিএ-৫ পাওয়াটাই মূল বিষয় নয়, রাষ্ট্রের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠা গুরুত্বপূর্ণ। আশাকরি এই প্রতিষ্ঠান থেকে যারা বের হবে, তারা রাষ্ট্রের সুনাগরিক হবে।
উল্লেখ্য, দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিপিএসসি এখন প্রথম, যাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে এমন বিশ্বমানের সহপাঠ কার্যক্রম ও ক্রীড়া সুবিধা রয়েছে।
ট্যালেন্টস ডেন কমপ্লেক্সে রয়েছে সংগীত ও নৃত্যের জন্য আলাদা স্টুডিও আর্ট, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, তায়কোয়ান্দো ও সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। এখানে প্রতিটি বিভাগ পরিচালনা করছেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে উচ্চ প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকরা, যাতে শিক্ষার্থীরা পেশাদার মানের প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পায়।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ট্যালেন্টস ডেনের লক্ষ্য হলো বিপিএসসির শিক্ষার্থীদেরকে ভবিষ্যতের নেতৃত্বে পরিণত করা—যারা শুধু শিক্ষায় নয়, চরিত্র, সৃজনশীলতা ও দলগত দক্ষতাতেও উৎকর্ষ দেখাবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিপিএসসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ট্যালেন্টস ডেন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এক নতুন যুগে প্রবেশ করল—যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী নিজের অন্তর্নিহিত প্রতিভা আবিষ্কার ও বিকাশের সুযোগ পাবে।