‘এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গেলে’ কম্বোডিয়ার একজন সেনা সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার জেরে থাইল্যান্ডের সঙ্গে দেশটির কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) তোলার কথা জানিয়েছেন কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানে। সোমবার তিনি এই ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড এবং লাওস এই তিনটি দেশের মধ্যে অভিন্ন একটি সীমান্ত আছে। সেই অঞ্চল এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গেল নামে পরিচিত। ওই সীমান্তে অনেকদিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজমান।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সীমান্তে সম্প্রতি কম্বোডিয়ার একজন সেনা সদস্য নিহত হন।
কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, থাইল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধের জের ধরে তার সরকার আইসিজে’তে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করবে।
সংসদীয় সভায় হুন মানে বলেন, সীমান্ত সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা নিয়ে ভবিষ্যতে যেন আর কোনও সশস্ত্র সংঘর্ষ না হয়, সে লক্ষ্যেই আমরা চাই থাইল্যান্ড আমাদের সঙ্গে যৌথভাবে এই বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে যাক।
তবে তিনি সতর্ক করে জানান, যদিও থাই সরকার এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না চায়, কম্বোডিয়া এককভাবেই আইসিজে’তে আবেদন করবে।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সাল থেকেই থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিশেষ করে ঐতিহাসিক প্রাচীন মন্দির ও সংলগ্ন এলাকা ঘিরে এই বিরোধ বেশি। তখনকার সামরিক সংঘাতে কমপক্ষে ২৮ জন নিহত হন। সর্বশেষ সহিংসতা ঘটেছে গত বুধবার ২৮ মে, যখন থাই সীমান্ত সংলগ্ন এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গেল এলাকায় এক কম্বোডিয়ান সেনা প্রাণ হারান। পরদিন কম্বোডিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থাই দূতাবাসে এক কূটনৈতিক বার্তায় ‘একতরফা ও উসকানিমূলক হামলার’ নিন্দা জানায় এবং ঘটনার ‘তাৎক্ষণিক ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত’ দাবি করে।
কম্বোডিয়া এই হামলাকে ‘রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করে এবং শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধানের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে। ঘটনার পর কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী দাবি করে, তারা ‘প্রথমে আক্রান্ত’ হয়। তবে থাই সেনাবাহিনী পাল্টা দাবি করে, তারা কেবল ‘গুলি বর্ষণের জবাবে’ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। পরদিন দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তারা বৈঠকে বসেন এবং উত্তেজনা প্রশমনের সিদ্ধান্তে উপনীত হন।
থাইল্যান্ড জানিয়েছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি যৌথ সীমান্ত কমিটি বৈঠক করা হবে এ ইস্যুতে। হুন মানের ভাষ্যমতে, এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গেলের পাশাপাশি তা মোয়ান থম মন্দির অঞ্চলের বিষয়ও আন্তর্জাতিক আদালতে উত্থাপন করা হবে। এ বছর ওই অঞ্চলের পাশেই একটি দেশাত্মবোধক খেমার গান গাওয়া নারীর ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে থাইল্যান্ড এ নিয়ে কূটনৈতিক আপত্তি জানায়।
কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের উল্লেখযোগ্য অংশ এখনও স্পষ্টভাবে চিহ্নিত হয়নি। এই সীমান্ত অনেকাংশে ফরাসি ঔপনিবেশিক আমলে তৈরি মানচিত্রের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত।
২০০৮ সালে প্রেয়া বিহার মন্দির ঘিরে সামরিক সংঘর্ষের পর আইসিজে ২০১৩ সালে রায় দেয় যে, মন্দির সংলগ্ন বিতর্কিত এলাকা কম্বোডিয়ার অন্তর্ভুক্ত। সূত্র: ব্যাংকক পোস্ট, আনাদোলু এজেন্সি, ফ্রান্স২৪
বিডি প্রতিদিন/একেএ