২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশ তেমন উন্নত হয়নি। সর্বশেষ ব্যবসা পরিবেশ সূচক বা ক্লাইমেট ইনডেক্স (বিবিএক্স) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে সূচক বেড়েছে মাত্র ০ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সূচক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ দশমিক ৬৯, যা আগের বছর ছিল ৫৮ দশমিক ৭৫। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ (পিইবি) যৌথভাবে এ বিবিএক্স জরিপ করেছে। দেশের আটটি বিভাগের ১২টি খাতের ৮০০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে নিয়ে এ জরিপ পরিচালিত হয়। গতকাল রাজধানীর গুলশানে এমসিসিআইয়ের কার্যালয়ে এ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চমূল্যস্ফীতি, সুদের হার বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ব্যবসা পরিবেশকে চাপে রেখেছে। বিবিএক্স ১১টি সূচকের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করেছে ব্যবসায় পরিবেশকে, যেমন- ব্যবসা শুরু, অর্থায়ন, কর প্রদান, জমি প্রাপ্তি ও নিয়ন্ত্রক তথ্যপ্রাপ্তি। এর মধ্যে পাঁচটি সূচকে উন্নতি হলেও ছয়টিতে অবনতি দেখা গেছে। অর্থায়নের প্রবেশাধিকারে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে, যার স্কোর ২৮ দশমিক ১১ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ০৭, যা তারল্য বৃদ্ধি ও পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচির ইতিবাচক প্রভাব নির্দেশ করে। ব্যবসা শুরু, কর প্রদান ও বিরোধ নিষ্পত্তিতেও উন্নতি হয়েছে। তবে ব্যবসা অবকাঠামো, শ্রমবিধান, প্রযুক্তি গ্রহণ ও পরিবেশগত মান-সংক্রান্ত সূচকে পতন ঘটেছে। খাতভিত্তিক পারফরম্যান্সে কৃষি, ওষুধ ও খাদ্যপণ্য ভালো করেছে, কিন্তু নির্মাণ, হালকা প্রকৌশল ও বস্ত্রশিল্প পিছিয়ে আছে। রপ্তানিনির্ভর প্রস্তুতকৃত গার্মেন্টস খাতের স্কোর মাত্র ৫৯ দশমিক ২৪, যা কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করে। অঞ্চলভিত্তিক র্যাংকিংয়ে বরিশাল বিভাগ শীর্ষে (৬২ দশমিক ৮), এরপর সিলেট (৬১ দশমিক ৫) ও ময়মনসিংহ (৬১ দশমিক ৩)। প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র ঢাকা (৫৯) ও চট্টগ্রাম (৬০ দশমিক ১) তুলনামূলকভাবে নিচের অবস্থানে রয়েছে।
প্রতিবেদন বলছে, ঘন ঘন রাজনৈতিক কর্মসূচি ও সরবরাহ চেইনে বিঘেœর কারণে রাজধানী ও বন্দরনগরীতে ব্যবসার সহজতা কমেছে। তবে ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব হ্রাস পেয়েছে, যা ব্যবসায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিবিএক্স প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্কার উদ্যোগ, তা ধীরগতির হলেও, বিনিয়োগ পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে গভীর কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা, বিশেষ করে ২০২৬ সালের এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে, ঝুঁঁকিতে পড়তে পারে।